রাশিয়া বিশ্বকাপে অপেক্ষা শেষ হলো বলে। চারদিন পরই মাঠে গড়াবে ফুটবল মহাযজ্ঞ। এরই মধ্যে সব দল নিয়ে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি গ্রুপ ধরে বিশ্লেষণ থাকছে বাংলানিউজের বিশেষ আয়োজন ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮।
গ্রুপ ‘ই’- ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, সার্বিয়া
ব্রাজিল
২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে যে দুঃস্বপ্ন গ্রাস করেছিলো ব্রাজিল দলকে, তা ক্রমেই কাটিয়ে ফেলেছে তারা। মূলত নতুন কোচ তিতের অধীনে এক ভিন্ন ও বিধ্বংসী দলে পরিণত হয়েছেন নেইমাররা।
রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম কোয়ালিফাই করা দল ব্রাজিল। এই অসাধারণ সময়ে অনেক স্মরণীয় জয় অর্জন করেছে দলটি। এর মধ্যে যে স্টেডিয়ামে জার্মানির কাছে ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই মিনেইরাওতেই আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় অন্যতম।
ক্রমেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় দাবিদারেও পরিণত হয়েছে সেলেকাওরা। হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক স্মরণকালের সেরা ব্রাজিল দলে। ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান কোচ তিতের অধীনে ১৩ জয়, ৩ ড্র আর মাত্র একটি পরাজয়ের পরিসংখ্যান বলে দেয় দলটির ফর্ম কতোটা দুর্দান্ত।
যদিও দলের প্রাণভোমরা নেইমার ইনজুরি থেকে পুরো সেরে উঠেননি। কিন্তু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শেষার্ধে নেমে ১ গোল করে নিজের ফিটনেস আর ফর্মের অবস্থা জানান দিয়েছেন তিনি।
মূল খেলোয়াড়: নেইমার জুনিয়র (পিএসজি)- ২৬ বছর বয়সী নেইমারের এটি দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। তার সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় মেসি কিংবা রোনালদোকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের স্বপ্ন সফল করার খুব ভাল রকম সম্ভাবনা আছে। যদিও দলে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের মতো তরুণ তারকা আছে, তবে এবারও ব্রাজিল দলে তাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে।
কোচ: তিতে-এমন একজন কোচ যিনি ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে লজ্জাজনক বিদায়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া একটা দলকে তুলে এনেছেন শীর্ষে। ফিরিয়ে এনেছেন ব্রাজিলিয়ানদের চিরায়ত শৌর্য। তার অধীনে ব্রাজিল আর শুধু নেইমারের ওপর নির্ভরশীল নয়। তরুণদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দারুণ ব্যালেন্সড দল গঠন করেছেন। তবে আক্রমণে দুর্বলতা থাকায় সংশয়ও আছে।
সুইজারল্যান্ড
বাছাইপর্বে পর্তুগালকে ২-০ গোলে হারিয়ে বাছাই পর্ব শুরুর পর সেই পর্তুগিজদের বিপক্ষে আবার শেষ ম্যাচে হেরে যায় ২-০ গোলে। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোলের ব্যবধানে সরাসরি বিশ্বকাপে পৌঁছে যান রোনালদোরা আর উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে গোল পেয়ে প্লে অফ থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয় সুইসদের।
বর্তমান সুইস দলটিকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার মতো যোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের অনূর্ধ্ব- ১৭ বিশ্বকাপজয়ী দলের মূল খেলোয়াড়দের নিয়েই দল গঠন করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার স্মৃতি নিশ্চয় আবারও ফিরিয়ে আনতে চাইবে দলটি। যদিও বাছাইপর্বে দুর্বল গ্রুপ থেকে ৯ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপে পা রেখেছে বলে সমালোচকরা নানান কটু কথা বলে এই দল নিয়ে। তথাপি এই দলটি বেশ গোছানো।
মূল খেলোয়াড়: ভালোন বেহরামি- দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তিনি। এই নিয়ে চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে চলেছেন বেহরামি। দলের তরুণদের সাথে সেতুবন্ধন রচনায় তার ভূমিকা বিশাল। মিডফিল্ডে তার ভূমিকাই হবে প্রধান। তাছাড়া দারুণ দক্ষতা ও ড্রিবলিং দিয়ে দলের আরেক ভরসা হেরদান শাকিরি।
কোচ: ভ্লাদিমির পেতকোভিচ-এই বসনিয়ানের হাত ধরেই এবার বেশ শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সুইজারল্যান্ড। বিশ্বকাপেও সাফল্যের ধারা ধরে রাখতে হলে তাকে ভরসা রাখতে হবে বেহরামি, শাকিরির মতো অভিজ্ঞদের দিকে।
কোস্টারিকা
৫০ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ কোস্টারিকার এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ উপস্থিতি। আক্রমণে দলের মূল ভরসা ব্রায়ান রুইজ। তবে গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের ওপরই বেশি ভরসা থাকবে দলটির। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট কোস্টারিকা এবারও বেশ গোছানো দল। সেবার ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে আর ইতালির সাথে একই গ্রুপে পড়েও কোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছেছিলো রামিরেজের দল। ফলে তাদের বাতিলের খাতায় রাখা হবে বড় বোকামি। মধ্য আমেরিকা থেকে সর্বাপেক্ষা সফলতম দল হিসেবেই বিশ্বকাপে এসেছে তারা।
মূল তারকা: কেইলর নাভাস (রিয়াল মাদ্রিদ)- শুধু দল নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক তিনি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণেই তাকে দলে ভিড়িয়েছে ইউরোপ সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। ফলে তাকে ঘিরেই কোস্টারিকার স্বপ্ন নিহিত।
কোচ: অস্কার রামিরেজ- সাবেক মিডফিল্ডার অস্কার রামিরেজের হাতে ২০১৫ সালে দায়িত্ব তুলে দেয় কোস্টারিকা। দায়িত্ব নিয়ে এখন পর্যন্ত দারুণ সফল তিনি। দলকে সেরা ১৬-তে তুলতে পারলেই তিনি সফল।
সার্বিয়া
২০০৬ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে পা রেখেছে মধ্য-ইউরোপের দেশ সার্বিয়া। বাছাইপর্বের গ্রুপে সবচেয়ে বেশি (২০) গোল করেছিলো দলটি। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন তারকা খেলোয়াড় আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ। গ্রুপের বাকি তিন দল আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস আর অস্ট্রিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা দলটি বেশ ভারসাম্যপূর্ণ।
মূল খেলোয়াড়: ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ (জেনিত সেইন্ট পিটার্সবার্গ)- চেলসির সাবেক এই ডিফেন্ডার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সব ম্যাচেই খেলেছেন। তার নেতৃত্বেই দল সাজাবেন সার্বিয়া কোচ।
কোচ: ম্লাদেন ক্রস্টাজিচ- ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রথমে কোচহীন সার্বিয়া দলের তত্ত্বাবধায়ক কোচের দায়িত্ব নিয়ে ডিসেম্বরে মূল দায়িত্ব গ্রহণ করেন এই সাবেক সার্ব তারকা। গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারলেই তার ও তার দলের সাফল্য হিসেবে ধরা হবে।
গ্রুপ পর্বে সম্ভাব্য সেরা দল: ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ড।