সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫
Homeটাঙ্গাইল জেলামির্জাপুরএকাধিক তালিকা নিয়ে মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

একাধিক তালিকা নিয়ে মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক তালিকা নিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এতে একদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা করছেন। অপরদিকে অভিযুক্ত বা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রহস্যজনক কারণে দুই দফা পিছিয়ে ১৬ মে মঙ্গলবার থেকে মির্জাপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে যাচাই-বাছাই কমিটিতে জামুকার প্রতিনিধি নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলায় ৮৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তি হওয়ার জন্য ৫৭০ জন অনলাইনে আবেদন করেছেন। তাদের তালিকাও যথাসময়ে প্রকাশ করা হয়েছে। পর পর দুইবার ১৮ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ ঘোষণা করা হলেও বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীনের ওপর অনাস্থার কারণ দেখিয়ে কমিটির সভাপতিসহ ৬ সদস্য যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকেন।

এদিকে অনলাইনে আবেদনকারীদের তালিকার সঙ্গে স্থগিতকৃত গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নামে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো আরও একটি তালিকা মির্জাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড অফিসের নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়। সেখানে দেখা যায় ২১৯ জন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে অভিযুক্ত বেনামে আরও একটি তালিকাও যাচাই-বাছাই কমিটির হাতে এসেছে। যেখানে মন্ত্রণালয় কর্তৃক অভিযুক্ত প্রায় সকলের নামসহ ৪২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। এর অধিকাংশ ব্যক্তিরা গেজেট ভূক্ত হয়ে সরকার থেকে ভাতা পেয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।

তবে তারা কেন অভিযুক্ত হলেন এর সদোত্তরও পাচ্ছেন না। এই দুই তালিকায় অভিযুক্তদের নামের সঙ্গে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামও রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বেশ কয়েকজন কোম্পানি কমান্ডার ও সংগঠকের নামও সেখানে রয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন। এদের ১৮, ১৯ ও ২০ মে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এখনও শুনানি হয়নি।

এদিকে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) এর প্রতিনিধি সাবেক কমান্ডার সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলকের নাম আসলেও অজ্ঞাত কারণে তার নাম দুই দফায় বাদ পড়ে। সর্বশেষ তার নাম বাদ দিয়ে মো. খলিলুর রহমানের নাম আশায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বাশতৈল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম, আর স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর আমার নাম আসে অভিযুক্তের তালিকায়। তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে আরও বলেন, এই বিতর্কিত তালিকার জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মির্জাপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিতে জামুকার প্রতিনিধি হিসেবে সরকার হিতেস চন্দ্র পুলকের নাম দুইবার এসেছিল। পরে তার নাম কিভাবে বাদ পড়লো তা তিনি জানেন না।

মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান সম্ভবত জিয়াউর রহমানের সময় মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। যাচাই-বাছাই কমিটির জামুকার প্রতিনিধি হিসেবে সরকার হিতেস চন্দ্র পুলকের নাম ছিল। পরে কিভাবে তার নাম বাদ পড়লো তা আমার বোধগম্য নয়।

মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সরকার হিতেশ চন্দ্র পুলক বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিতে জামুকার প্রতিনিধি হিসেবে আমার নাম দুইবার এসেছে। কিন্তু কী কারণে তার নাম বাদ দেয়া হয়েছে তা তার বোধগম্য নয়। তবে জামুকার প্রতিনিধি হিসেবে যার নাম এসেছে সে জিয়াউর রহমানের আমলে মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য মির্জাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্যে বাদ পড়া কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার যাচাই-বাছাই আগামী ৩০ মে অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া নীতিমালা অনুসারে মন্ত্রণালয় ও স্থানীয়ভাবে অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার মঞ্চে শুনানি হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জামুকার প্রতিনিধি সরকার হিতেস চন্দ্র পুলকের নাম বাদ পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি জামুকার বিষয়।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -