নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা কোরবানি করে থাকি। কোরবানি অবশ্যই গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু যেমন- গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির বিশেষ রীতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা এসব গৃহপালিত পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে। যেগুলো আল্লাহ তায়ালা রিজিকরূপে প্রদান করেছেন।’ (সুরা হজ : ৩৪)। কোরবানির পশু সুন্দর, সুস্থ ও নিখুঁত হওয়া চাই। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন কোরবানিকৃত পশুর লোম, খুর ও শিংসহ উপস্থিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩১২৬)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের কোরবানির পশুগুলো শক্তিশালী ও মোটা-তাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ এগুলো পুলসিরাতের ওপর তোমাদের বাহন হবে।’ (মুসনাদুল ফিরদাউস : ১/৮৫)
পশুর বয়স : কোরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য পশুর বয়স পূর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। তবে ভেড়া বা দুম্বা ছয় মাসের বেশি ও এক বছরের কিছু কম হয়, কিন্তু দেখতে এক বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারা কোরবানি করা যাবে। তবে ছাগলের বয়স এক বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই কোরবানি জায়েজ হবে না। (কাজিখান : ৩/৩৪৮)
পশু ত্রুটিমুক্ত হওয়া : কোরবানির পশু যাবতীয় দোষত্রূটি থেকে মুক্ত হতে হবে। যে পশুর দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে বা এক চোখ পুরো নষ্ট, এমন পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়। যে পশুর এক পা খোড়া তা মাটিতে রাখতে পারে না, তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়। হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো কোরবানির পশুর মধ্যে কোনগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চারটি আঙুলি দ্বারা ইশারা করলেন এবং বললেন, চার প্রকার পশু থেকে- ১. স্পষ্ট খোড়া প্রাণী; ২. একদম অন্ধ প্রাণী; ৩. খুব অসুস্থ প্রাণী এবং ৪. অত্যধিক দুর্বল প্রাণী, যা আর সুস্থ হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৮৬৯৭)
দাঁত ও শিং থাকা : যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৫)। যে পশুর শিং গোড়া থেকে ভেঙে গেছে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। আর যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু অংশ শিং ভেঙে গেছে অথবা শিং একেবারে ওঠেনি সে পশু কোরবানি করা জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২১৬)
কান বা লেজ কাটা না হওয়া : পশুর কান বা লেজ এক তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে কোরবানি হবে না। কিন্তু যদি জন্মগতভাবে কান ছোট হয় তবে সমস্যা নেই। হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন ভালো করে পশুর চোখ ও কান পরীক্ষা করে নেই। আর আমরা যেন কানের পিছন থেকে কেটে ঝুলে থাকা এবং পশুর পিছনের কোনো অংশ কেটে ঝুলে থাকা পশু কোরবানি না করি।’ (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/২৯৭)
গর্ভবতী পশু : গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। জবেহের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সেটাও জবেহ করতে হবে। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কোরবানি করা মাকরুহ। (ফাতাওয়া শামি : ৫/২৮১)
পাগল পশু : পাগল পশু কোরবানি করা জায়েজ। তবে যদি এমন পাগল হয়, যেটা ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কোরবানি জায়েজ হবে না। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৫২)
লেখক : শিক্ষক, যিন নূরাইন ওয়ালীয়া মডেল মাদ্রাসা, আশকোনা, দক্ষিণখান, ঢাকা