নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গত বছরের বন্যায় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে লেবু চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। প্রায় ১৭০ হেক্টর লেবু বাগান পানির নিচে তলিয়ে যায়। অনেকে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে লেবু চাষ থেকে সরে দাড়ায়। তবে যারা সুদিনের অপেক্ষায় ছিলেন তারা সেই ক্ষতিটাকে এখন কাটিয়ে উঠে হাট-বাজারে লেবু বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলায় লেবুর বাজারে চড়া মূল্য থাকায় চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে থেকে উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের পুটিয়াজানির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে কৃষক তাদের জমিতে লেবু চাষ করে আসছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে পুটিয়াজানি এখন লেবুর গ্রাম হিসেবে পরিচিতি। গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট খাটো অসংখ্য লেবু বাগান। অচেনা যে কারো মনে হতে পারে এ এটি গ্রাম নয় যেনো এক লেবু বাগান। এছাড়া যাদের আবাদ করার মতো জমি রয়েছে তারা অন্যান্য ফসলের আবাদ বাদ দিয়ে লেবু চাষ করছেন। প্রতিদিন দুপুর ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত লেবুর হাট বসে পুটিয়াজানি বাজারে। ওই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার’রা আসে লেবু কিনতে। চলতি মৌসুমে লেবুর বাজারে চাহিদা বেশি হওয়ায় হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেশি দেখা যাচ্ছে।
চাষিদের দেয়া তথ্যে মতে, ১শ’ লেবু ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বস্তা লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি বস্তায় ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ লেবু থাকে। আর লেবুর ধরন অনুযায়ি প্রতিটি লেবু ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৮ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে।
লেবু চাষী নুরুল ইসলাম জানায়, বন্যায় লেবু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য মৌসুমের শুরুতেই লেবু বাজার মূল্য বেশি। এ ছাড়া এ অঞ্চলের লেবুর সারা দেশে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। বছরে লেবু বিক্রি করে ২ লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
শওকত মিয়া জানায়, এ বছর লেবু দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি হওয়া তিনি বেজায় খুশি। তবে রমজানের শুরুতে লেবুর দাম আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও তার অভিমত।
আব্দুর রহমান জানান, লেবু চারা একবার রোপন করলে ৩ বছর পর থেকে পূর্ন ফল দেয়া শুরু করে। একটি লেবু গাছ প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। তিনি ১ হাজার শতাং জায়গা জুড়ে লেবু চাষ করছেন। বছরে তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করেন লেবু বিক্রি করে।
তিনি আরো জানান গাছের ফুল ঝড়ে যাওয়া সহ নানা সমস্যা রয়েছে লেবু আবাদে। চাষিদের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি উপজেলা কৃষি অফিসকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে। উপজেলার পুটিয়াজানি গ্রামে সবচেয়ে বেশি লেবু বাগান থাকায় ওই গ্রামে প্রতিদিন লেবু হাট বসে। এ অঞ্চলে এলাচি জাতের লেবু বেশি চাষ হচ্ছে। সারা দেশেই এ লেবু জনপ্রিয়তা রয়েছে। কম বিচি সুগন্ধ আঁশযুক্ত, এবং লেবুতে প্রচুর পরিমানে রস থাকায় যে কেউ সহজে পছন্দ করেন এই লেবু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ সুরাইয়া সুলতানা জানান, উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। সুগন্ধযুক্ত রসালো আঁশ ও স্বল্প বিচি লেবুর অন্যতম বৈশিষ্ট। সে কারনে এ অঞ্চলের লেবুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলের লেবু দেশ ও বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে লেবু চাষের প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে।