রবিবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
Homeটাঙ্গাইল জেলাঘাটাইলঘাটাইলে চব্বিশ দিনের ব্যবধানে দম্পতি খুন ॥ শংকায় অবুঝ দু’টি শিশু

ঘাটাইলে চব্বিশ দিনের ব্যবধানে দম্পতি খুন ॥ শংকায় অবুঝ দু’টি শিশু

নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক:

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় রক্ষকের বিরুদ্ধে বক্ষকের অভিযোগ উঠেছে।  পুলিশের গাফিলতির কারনে মাত্র চব্বিশ দিনের ব্যবধানে খুন হলেন দম্পতি, পিতৃ ও মাতৃহীন হলেন রকিবুল হাসান (১২) ও তামান্না (৪) নামে দু’টি শিশু সন্তান।
তাদের কোন নিরাপত্তা নেই।  যে কোন সময় তাদের জীবনের উপর নেমে আসতে পারে খুনের ভয়াল থাবা।  অন্ধকার হয়ে গেল শিশু দু’টির ভবিষ্যত।  কি দোষ ছিল তাদের।  তারা প্রতিনিয়ত মা, বাবা বলে চিৎকার করছে।
এরপরও দম্পতি হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে পুলিশের সাথে সখ্যতা করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।  স্ত্রী খুনের মামলা প্রধান আসামী প্রতিবেশী মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে আওয়ামীলীগ সমর্থক প্রভাবশালী ইমান আলী, হাছেন আলী, আজমত আলী ও ফয়েজ আহম্মেদের ছেলে মনা মিয়া কে পুলিশ গ্রেফতার করলে হয়তো স্বামী কে খুনের স্বীকার হতো না, এমনটি ধারনা করেছেন আত্নীয় স্বজন ও এলাকাবাসী।  তারা বার বার পুলিশের দ্বারে ঘুরে নিজেরাই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন।
এ মতবস্থায় কৈডলা গ্রামবাসী পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।  দম্পতির আতœীয় স্বজনরা উল্টো পুলিশী নির্যাতন ও খুনিদের ভয়ে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে তারা আইন প্রয়োগকারী পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।  ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের কৈডলা গ্রামে।
সরোজমিনে, স্ত্রী আকলিকা বেগম খুনের মামলা করতে গিয়ে উল্টো নির্মম পুলিশী নির্যাতনের স্বীকার দিনমজুর আব্দুল লতিফ নিজেই খুন হলেন।  মাত্র চব্বিশ দিনের ব্যবধানে এই দম্পতিকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়।  শনিবার (২৬ আগষ্ট) সকালে মধুপুর জলছত্র এতিমখান মোড়ের জঙ্গল থেকে আব্দুল লতিফ-এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ পূর্বে বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) রাতে ঘাটাইল উপজেলার দিগর ইউনিয়নের কৈডলা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে গৃহবধূ আকলিমা বেগমের রক্তাত্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘাটাইল থানা পুলিশ অজ্ঞাত কারণে আসামীদের গ্রেফতার না করে পূর্ণরায় বাদী পক্ষকে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতনের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে।  বাদী পক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে পুলিশ আসামীদের নাম বাদ দিয়ে তাদের ইচ্ছে মতো মামলা তৈরি করছেন বলেও জানান তারা।
এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার (২৫ আগষ্ট) সকালে আব্দুল লতিফ বাড়ী থেকে হামিদপুর বাজারের উদেশ্যে বের হয়ে যায়।  এর আর বাড়ী না ফেরায় বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনদের বাড়ীতে খোঁজ খবর করা হয়।
পরদিন শনিবার দুপুরে মধুপুরের জলছত্র এতিম খানা রোডের জঙ্গলের ভেতর রাস্তা থেকে রাশেদ, আলামিন ও নাসির নামের তিনজন লোক রাস্তার পাশে আব্দুস লতিফ মুখে বিষ খাওয়া অবস্থা পরে থাকতে দেখে এবং মধুপুর থানা পুলিশকে খবর দেন।  পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যায়।  রাস্তায় যে পুলিশকে মৃত্যুর সকল বয়ান দিয়ে গেছে বলেও পুলিশ জানায়।
পরে, হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষনা করেন।  ময়মনসিংহ থেকে লাশ নিয়ে এসে টাঙ্গাইল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল থানায় মামলা করতে গেলে ঘাটাইল থানা পুলিশ পূর্বের ন্যায় আসামীদের নাম বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরি করা মামলা দায়ের করেছেন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, দিনমজুর মোঃ লতিফ-এর সাথে প্রতিবেশী মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে ইমান আলী, হাছেন আলী, আজমত আলী ও ফয়েজ আহম্মেদের ছেলে মনা মিয়ার সাথে দীর্ঘ দিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল।
এ বিরোধের জের ধরে বিবাদী পক্ষ মাঝে মধ্যে লতিফও তার স্ত্রী নিহত আকলিমাকে মারপিট এবং জীবন নাসের হুমকি দিয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে বাদী পক্ষ স্থানীয় মাতাব্বরদের স্মরনাপর্ণ হলে তারা পুলিশকে জানাতে বলেন।  বিবাদী পক্ষ সরকার দলীয় সমর্থক হওয়ায় গ্রামবাসী তাদের ভয় পান।
যার কারনে গৃহবধূ আকলিকা (৩৫) খুন হওয়ার দুই-আড়াই মাস পূর্বে গত ২২ মে ঘাটাইল থানায় চার জনকে বিবাদী করে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।  যার ডায়েরী নম্বর ৯৩৬।
কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিবাদী পক্ষ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গত এক আগষ্ট রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার সময় আমার বোন গৃহবধূ আকলিমা প্রকৃতিক ডাকে বাহিরে আসেন।
এ সময় পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বিবাদী পক্ষ তাদের হাতে থাকা দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে মাথায় এলোপাথালী কুপিয়ে এবং আঘাত করে ফেলে রেখে যায়।
পরে তার ডাক চিৎকারে স্বামী লতিফ ঘর থেকে বাহির আসলে বিবাদীগণদের ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোঠা হাতে পালিয়ে যেতে দেখেন এবং তার স্ত্রীকে উঠানে রক্তাত্ত অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন।
পরে লতিফের ডাক চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে ঘটনার সত্যতা দেখতে পান।  এসময় স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
এ ব্যাপারে দিন মজুর আব্দুল লতিফ ঘাটাইল থানায় স্ত্রী খুনের মামলা করতে গেলে উল্টো তাকেই আটক করে।  হত্যার দ্বায় স্বীকারের জন্য স্বামী লতিফকে ইলেকট্রিক সর্টের মাধ্যমে ও নাকে-মূখ গরম পানি দিয়ে নির্যাতন চালায়।  একই সাথে এ ব্যাপারে মামলা করতে চাইলে পরিবারের সকলের অবস্থা একই হবে বলেও হুমকী প্রদাণ কওে পুলিশ।
পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।  সেখানে খুনের দায় নেয়ার জন্য লতিফকে কঠোর নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে জীবননাশের হুমকী প্রদান করে পুলিশ।
এমতবস্থায় বাদী নিজের স্ত্রী হত্যার বিচার না পেয়ে উল্টো আসামী ও পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে নিজের প্রাণ রক্ষার্থে দুটি ছোট শিশু সন্তান নিয়ে বিচারের আশায় নিরাপত্তহীনতায় গত (১৫ আগষ্ট) বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মায়ের হত্যার বিচার দাবি করেন অবুঝ দুই শিশু ও তার পিতা আব্দুল লতিফ সহ আত্নীয় স্বজনরা।  এ সময় শিশু দু’টি কান্নায় ভেঙ্গে পরে।
সংবাদ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত গৃহবধূর স্বামী দিনমজুর মোঃ লতিফ।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত গৃহবধূর পিতা আব্দুল করিম, মাতা মোছা: ছালেহা বেগম, ভাই গোলাম মোস্তফা, বোন সাবিনা বেগম, চাচা খলিরুর রহমান, বোন জামাতা আব্দুল লতিফ ও মোঃ নাজিম উদ্দিন, শ্বাশুড়ী রহিমা খাতুন, ভাসুর হারেজ আলী, দেবর আব্দুস সালাম, কায়েম আলী, আজাহার আলী, সোহাগ, শহীদ, ফাতেমা ও হাবিবুর রহমান সহ প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের কারণে আসামী ও পুলিশ বাদীর প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।  আর এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র চব্বিশ দিনের ব্যবধানে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয় স্বামী আব্দুল লতিফকে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -