মো: আবু শাহেদ, চট্টগ্রাম থেকে। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যখন নিজের পেশাকে পেছনে ফেলে নিজ এবং পরিবারকে বাঁচাতে সরকারি নির্দেশনানুযায়ী ঘরে আবদ্ধ থেকেছে। কোনমতে চলা উপযোগী খাদ্যশষ্য নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে ঠিক তখনি বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল তাদের হতাশ করছে। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। যেখানে গড় হারে মাসিক বিল দিতেই হিমশিম সেখানে কয়েকগুন বিল।
অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে বিদ্যুতের এসব অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করে পরিশোধ করছেন বিল না হয় সংযোগ কেটে দেয়ার হুমকি। হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে কথা বলে এ সত্যতা পাওয়া গেছে।
মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হয়ত অনেকের বাসাবাড়ি হতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। অনেক চেষ্টা করেও বিল হয়ত পরিশোধ করতে পারবেন না তাই বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে অনেকের। এসব বিষয় জানতে মঙ্গলবার হাটহাজারী পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে অতিরিক্ত বিদ্যুত বিল প্রদানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকদের বাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে রিডিং লিখতে না পারায় অফিসে বসে গত বছরের অানুমানিক হারে বিল করা হয়েছে।
তিন মাস পর লকডাউন শিথিল হওয়ায় মাঠকর্মীরা গ্রাহকদের রিডিং মিলিয়ে দেখতে পাচ্ছে অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। তবে গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে রিডিং দেখে সমন্বয় করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দেড় শতাধিক এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছেন বলেও জানান প্রতিবেদককে। করোনায় জরুরী সেবা সরকারি নির্দেশনানুযায়ী বন্ধ ছিলনা দ্বিতীয়ত বসতবাড়ি, অফিস আদালত, দোকানপাটে বিদ্যুতের মিটার ভেতরে নয় বাহিরে থাকে তাহলে কেন যাওয়া হয়নি এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আলাউদ্দিন।
এদিকে দেখা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে অভিযোগ নিয়ে অনেকেই লাইন ধরে দাড়িয়ে আছেন। প্রায় সবার অভিযোগকে আমলে নিয়ে সমন্বয় করে দিলেও গ্রাহকরা জানান এতো যে লাউ সে কদু। নড়েচড়ে আমাদের কাঁধে বিলটি তুলেই দেয়া হয়েছে। হয়ত একসাথে না দিলেও দুতিন মাসে দিতে হবে। একেবারে অতিরিক্ত বিল মওকুফ করছেনা কোন গ্রাহকেরই।
অতিরিক্ত বিলের ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে আসা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক গাজি মোঃ ইউনুছ প্রকাশ সুবল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বোনসহ কয়েকজন আত্মীয়ের বিলের ব্যাপারে কথা বলতে আসছিলাম। এখানের কর্মকর্তারা কথাই বলতে চান না ভাল করে। তারা বলছে এটা নাকি তাদের উর্ধ্বতনদের নির্দেশ। তাই তারা অতিরিক্ত বিল করেছে। এরা নিজেরাই গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন মানুষকে বাঁচাতে আর এরা আসছে প্রধানমন্ত্রীর দুর্ণাম রটাতে। এনাম নামে একজন বলেন, আমাদের কর্মস্থল বন্ধ। পরিবার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তার উপর এত বিল। মাথায় আসছেনা কিভাবে পরিশোধ করব। তিনমাস ধরে রিডিং না দেখেই তারা ইচ্ছেমত বিল করেছেন বিদ্যুতের লোকেরা। এ যেন ঘরে বসেই গ্রাহকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে চাঁদাবাজির মত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিয়মনুযায়ী লকডাউনে জরুরী সেবা বন্ধ ছিলনা। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কাজ চালানোর সরকারি নির্দেশনা ছিল। যেমনটি প্রশাসন, হাসপাতালের উপর ছিল। কিন্তু তাদের মাঠকর্মীরা গ্রাহকদের রিডিং চেক না করেই আনুমানিক বিল বানিয়ে দিয়েছেন। তাদের কারণে আজ হাটহাজারীর গ্রাহকরা হতাশ। এরা কাউকেই মানতে চান না। এরা যেন নিজেরাই সরকার। করোনার চাইতেও বেশী ভাবিয়ে তুলেছে বিদ্যুত বিল। যাদের বিল গড় হারে মাসিক চারশ টাকা তাদের দেয়া হয়েছে দেড় হাজার থেকে দু হাজার টাকা। যাদের ৩/৪ হাজার তাদের দেয়া হয়েছে ১০/১৫ হাজার। সাইফুল নামে পৌর এলাকার এক যুবক বলেন, করোনায় সরকারি বেসরকারী ত্রাণ বিতরণে কোনমতে প্রাণটা বেঁচে আছে মানুষের। তাহলে এ পরিস্থিতিতে কেন তিন মাস ধরে অতিরিক্ত বিল নেয়া হচ্ছে।
প্রতিদিন গ্রাহকরা নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে ক্ষোভ জানিয়ে পোষ্ট করেছেন। নিন্দা জানিয়েছেন করেছেন প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদ সেই আর্তনাদ কি উর্ধ্বতন কারো দৃষ্টিগোচর হয়নি। কেন বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল দিয়ে মানুষকে হয়রাণি করা হচ্ছে এভাবে। জানতে পল্লী বিদ্যুত অফিসের নাম্বারে বার বার ফোন করলেও নাম্বারটি আর ব্যবহৃত হচ্ছেনা বলে কেটে সংযোগ কেটে যায়। এ ব্যাপারে অনেকেই হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, তারা সম্পূর্ন আলাদা একটা বিভাগ। অতিরিক্ত বিলের ব্যাপারে আমি শুনেছি। গ্রাহকরা যদি তাদের উর্ধ্বতনদের অবহিত করেন তাহলে অবশ্যই একটা সমাধান আসবে।
তবে দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে এভাবে কয়েকগুন বিল বাড়তি দেয়া এটা অবশ্যই দুঃখজনক। আশা করছি দপ্তরের উর্ধ্বতনরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। এদিকে গতকাল বিদ্যুত অফিসের একটি পিকআপ করে বিদ্যুত বিল পরিশোধে মাইকিং করতেও দেখা গেছে। মাইকিংয়ে বিল অনাদায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্নের কথাও বলা হয়েছে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।