Newstangail.ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিশ্বের সব দেশে জনসন বেবি ট্যালকম পাউডার উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন হেলথকেয়ার জায়ান্ট জনসন অ্যান্ড জনসন। একই অভিযোগে গত দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এ পণ্য বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে এখনও টনক নড়েনি বাংলাদেশের। অনেক ক্রেতা-বিক্রেতারই এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই যেকোনো প্রসাধনীর দোকানে হাত বাড়ালেই মিলছে এ পণ্য।
এর আগে ২০২০ সালে জনসন অ্যান্ড জনসন জানায়, ‘বিরূপ প্রচারের’ কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তারা আর বেবি পাউডার বিক্রি করবে না। তবে যুক্তরাজ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিসি জানিয়েছে, এক সময় বিশ্বজুড়ে প্রচুর বিক্রি হওয়ায় ওই বেবি পাউডারে ক্যানসারের উপাদান মেলার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার নারীর মামলা চলছে জনসনের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, যে পাউডারকে তারা শিশুর জন্য ভালো মনে করতেন, অ্যাজবেস্টসের মতো ক্ষতিকর উপাদান থাকায় তা ডিম্বাশ্বয়ের ক্যানসারের কারণ হচ্ছে।
জনসন অ্যান্ড জনসন অবশ্য আগের মতোই দাবি করেছে, বহু বছরের স্বাধীন গবেষণায় তাদের পণ্য ‘পুরোপুরি নিরাপদ’ বলেই বিবেচিত হয়েছে। এক বিবৃতিতে এ কোম্পানি বলেছে, তাদের যেসব কারখানায় ট্যালকম পাউডার উৎপাদন হতো, আগামীতে সেখানে তৈরি হবে কর্নস্টার্চভিত্তিক বেবি পাউডার। এটা তাদের বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে তাদের কর্নস্টার্চভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রিও হচ্ছে।
ট্যালকম পাউডারে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান থাকার অভিযোগে মামলায় জর্জরিত হলেও জনসন তাদের আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। বিবৃতিতে জনসন বলছে, আমাদের ট্যালকম পাউডার যে নিরাপদ, সে বিষয়ে আমাদের অবস্থান বদলায়নি। কয়েক দশক ধরে পৃথিবীজুড়ে মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের স্বাধীন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নিশ্চিত করেছে, বেবি পাউডার নিরাপদ, সেখানে কোনো অ্যাজবেস্টস নেই এবং ক্যানসারও ঘটায় না।
জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এক মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ২২ জন নারীকে ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ওই নারীরা মামলায় অভিযোগ করেন, কয়েক দশক ধরে জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করায় তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগকারী ২২ নারীর মধ্যে ছয়জন ক্যানসারে ভুগেই মারা যান।
রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বেশ কয়েক দফা পরীক্ষায় অ্যাজবেস্টসের উপস্থিতি ধরা পড়লেও তা গোপন করে বিক্রি চালিয়ে গেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। জনসনের বেবি পাউডার প্রায় ১৩০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়ে আসছে, যা পরিবারবান্ধব পণ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক এ কোম্পানির তৈরি সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, পাউডারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়। অনেক বাবা-মা নিরাপদ মনে করেই তাদের সন্তানদের জন্য জনসনের পণ্য কেনেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে এটি বিক্রি বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশে এখনও হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে জনসন বেবি পাউডার। প্রায় প্রতিটি প্রসাধনীর দোকানেই রয়েছে ক্ষতিকর এ পণ্য।
সরজমিনে মিরপুর, ফার্মগেট ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে জনসন বেবি পাউডার। কাঁঠালবাগান এলাকায়, ‘মাশাল্লা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি দোকানে চাওয়া মাত্র পাওয়া যায় জনসন বেবি পাউডার। দুইশ গ্রাম পাউডারের মূল্য লেখা আছে ২৭৫ টাকা। আমদানি ও উৎপাদনের তারিখ লেখা আছে ৪ এপ্রিল ২০২২। মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে মার্চ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ওই মামলার রায়ের পর বাংলাদেশে জনসনের বেবি পাউডারে ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার ঘোষণা দিয়েছিল সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই।
বিবিসি লিখেছে, ট্যালক পাওয়া যায় খনিতে, আর সাধারণত অ্যাজবেস্টসের কাছাকাছি ট্যালকের খনি থাকে। অ্যাজবেস্টসের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
২০১৮ সালে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, জনসন ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের কাঁচা ট্যালকম এবং বিচূর্ণ পাউডার পরীক্ষা করে অ্যাজবেস্টসের উপস্থিতি পেলেও বিষয়টি চেপে রাখে। কিন্তু কোম্পানির নথিপত্রে তার প্রমাণ ছিল।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
-
"নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল
SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।