নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক : মহান ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৬৬বছর অতিবাহিত হওয়া সত্বেও আজও টাঙ্গাইলের নতুন-পুরাতন ১ হাজার ৯৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষার জন্য আত্মদানকারীদের স্মৃতিসংরক্ষণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
জানা গেছে, মহান ভাষা আন্দোলনের সময়ে টাঙ্গাইলেও গড়ে উঠেছিল দুর্বার আন্দোলন। ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদিউজ্জামান খান, সৈয়দ আবদুল মতিন, সৈয়দ নুরুল হুদা, শামসুর রহমান খান শাজাহান, মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল, আবু সাঈদ খান, হাতেম আলী তালুকদার, রমিনুজ্জামান খান রইজ, নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস ঋষিকেশ পোদ্দার, হাবিবুর রহমান, বুলবুল খান মাহবুব, নাজমি আরা রুবি প্রমুখ। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে সরকারের হুলিয়া মাথায় নিয়ে তৎকালীন রমেশ হলের নিকটে (বর্তমানে সাধারণ পাঠাগারের পশ্চিমপাশে) তারা টাঙ্গাইলে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করেন। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তৃতীয় সংস্করণের রূপ। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা সময়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও জেলার ১ হাজার ৯৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা না হওয়ায় দেশপ্রেম ও চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভাষা সৈনিকরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২ টি উপজেলায় সরকারি ও জাতীয়করণকৃত মোট ১ হাজার ৬২৯ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৫১৬ টিতেই শহীদ মিনার নেই। এরমধ্যে ঘাটাইলের ১৭৩টির মধ্যে ৫টিতে, সখীপুরে ১৫০ টির মধ্যে ৬টিতে, গোপালপুরে ১৬১টির মধ্যে ৭টিতে, বাসাইলে ৭৯ টির মধ্যে ৩ টিতে, টাঙ্গাইল সদরের ১৬৪ টির মধ্যে ১৩ টিতে, দেলদুয়ারের ১০০ টির মধ্যে ৫ টিতে, মির্জাপুরে ১৬৯ টির মধ্যে ৭ টিতে, কালিহাতীর ১৭২ টির মধ্যে ২৬ টিতে, মধুপুরে ১১০ টির মধ্যে ১০ টিতে, নাগরপুরে ১৫৬ টির মধ্যে ৭ টিতে, ভূঞাপুরে ১১০ টির মধ্যে ২ টিতে এবং ধনবাড়ীর ৮৫ টির মধ্যে ২২ টিতে মোট ১১৩ টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এদিকে, জেলা শিক্ষা অফিসের অধীনে ৮০৫ টি হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। এরমধ্যে ৪৩০ টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরের ৭৪ টির মধ্যে ১০ টিতে, বাসাইলের ৪০ টির মধ্যে ১৫ টিতে, কালিহাতীর ৮৩ টির মধ্যে ২৭ টিতে, সখিপুরের ৫৫টির মধ্যে ৩১ টিতে, ঘাটাইলের ৪৯ টির মধ্যে ২৫ টিতে, গোপালপুরের ৭০ টির মধ্যে ৪০ টিতে, মধুপুরের ৯২ টির মধ্যে ৩৮ টিতে, ধনবাড়ীর ৫৬ টির মধ্যে ২৫ টিতে, মির্জাপুরের ৭৯ টির মধ্যে ৪৯ টিতে, দেলদুয়ারের ১০৬ টির মধ্যে ৫০ টিতে, নাগরপুরের ৪১ টির মধ্যে ২৭ টিতে ও ভূঞাপুরের ৬০ টির মধ্যে ৩৮ টিতে মোট ৩৭৫ টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকে না। শিশুদের মনে মাতৃভাষার যথাযথ ইতিহাস তুলে ধরার জন্য শিক্ষাখাতের বরাদ্দ থেকে কিংবা বিত্তবানদের সহযোগিতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা দরকার। টাঙ্গাইলের ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত কবি বুলবুল খান মাহবুব বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়েছিল ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, যা সারাবিশে^ পালিত হয়। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের বহু বছর চলে গেলেও টাঙ্গাইলের এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা অত্যন্ত লজ্জা ও হতাশাজনক। এতে আমাদের দেশপ্রেম ও বাঙালীর চেতনাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ। আইন করে হলেও মাদ্রাসাসহ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আশরাফুল মমিন বলেন, টাঙ্গাইল জেলার এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই এই সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের জানা ছিলনা। মাদ্রাসাসহ প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা উচিত। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্যে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করব। সেইসাথে এবিষয়ে সরকারের দৃষ্টিগোচর এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্যে মন্ত্রণালয় বরাবর লিখব।