নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্রিটিশ শাসনামলে ভক্ত সাধুখ্যাত সন্ন্যাসী মাদব ঠাকুরের মূর্তি স্থাপন করে মনোবাসনা পূরণে গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনার শুরু। তখন থেকেই মূলত গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনা চলে আসছে। পরে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ-উৎসব হিসেবে উদযাপন করে আসছিল। ওই সময় থেকেই গঙ্গাস্নান (ডুবের মেলা) নামে পরিচিত লাভ করে।
‘ডুবের মেলা’র দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারও টাঙ্গাইলের বাসাইলে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপি উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে বংশাই নদীর পূর্ব-উত্তর তীরে রাশড়া-সৈয়দামপুর গ্রামে দিনব্যাপী ‘ডুবের মেলা’র আয়োজন করা হয়। এসময় ‘ডুবের মেলা’ দেখতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
‘ডুবের মেলা’র শুরুতে ‘দেবতা’ মাদব ঠাকুরের মূর্তিতে প্রণাম করে গঙ্গাস্নানের মাধ্যমে পূজার কার্যক্রম শুরু করেন নানা বয়সীরা। এ ছাড়া পাপ এবং শাপ মোচনে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব শেষ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন তারা।
এদিকে, ‘ডুবের মেলা’ কেন্দ্র করে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার, বাশঁ-বেতের তৈজসপত্র, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা, পুতুল, ঘোড়া, ট্রাক গাড়ি, হাড়ি-পাতিল, মাছের দোকান, চিড়া-মুড়ি, দইসহ দোকানিরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন।
পূণ্যার্থীরা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচন উপলক্ষে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব সমাপণ করেন। গঙ্গাস্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়। মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। এই স্নান অংশ নিলে পূর্ণ মিলে। দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসে গঙ্গাস্নানে।
গঙ্গা স্নানে অংশ নেওয়া কমল বলেন, আজকে আমরা মাঘী পূর্ণিমার মেলায় আসছি। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পূর্ণ্য স্থান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গঙ্গাস্নান হয়। ১০০ বছর ধরে এই গঙ্গাস্নান চলে আসছে। ডুবের মেলায় যারা আসে তারা মনের বাসনা নিয়ে গঙ্গাস্নান করতে আসেন। গঙ্গাস্নান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়।
মেলায় আসা সুমনা রায় বলেন, আজ মাঘীপূর্ণিমা। এ মাঘীপূর্ণিমার মধ্যে ‘ডুবের মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় এসে গঙ্গাস্নান ও পূজা দিয়েছি। মাঘী পূর্ণিমায় উপোস আছি। কেউ যদি উপোস থাকে, গঙ্গাম্নান ও পূজা দিয়ে খেতে পারে।
গঙ্গাস্নানে অংশ নেওয়া ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আসা রণজিত দাস বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করে যে আজকে এই মাঘীপূর্ণিমার তিথিতে উত্তর বাহিত জলে স্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়।অনেকের মনে আশা থাকে যে স্নান করলে তাদের মনের আশা পূরণ হয়।
মিষ্টি বিক্রেতা কাদের আলী বলেন, আমি ৩২ বছর ধরে এই মেলায় আসি। মেলায় ভালোই মিষ্টি বিক্রি হয়। মেলায় ১০-১২ মণ মিষ্টি বিক্রি করা যায়। মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়। এছাড়াও প্রচুর ধরণের দোকানপাট বসে।
পুরোহিত রবিন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, পূর্ব পুরুষ থেকে এই গঙ্গাস্নান শুরু হয়েছে। এই গঙ্গাস্নানকে বলে মাঘীপূর্ণিমার গঙ্গাস্নান। ১৫-২০ জন পুরোহিত এই গঙ্গাস্নানে এসেছে। দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন গঙ্গাস্নানে অংশ গ্রহণ করে। পূণ্যার্থীরা তাদের মনের বাসনা নিয়ে এখানে আসেন। তারা ডুব দিলে তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমায় তাদের মনের বাসনা পূরণে এই ডুবের মেলা পালন করে থাকেন। পূর্ব-পুরুষ থেকেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।