নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় করা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া আসামিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের কার্যক্রম শেষ করেন। সেই সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেন বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিষেশ পি.পি. অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার, রাষ্ট্রপক্ষে সহায়তা করেন মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী এস আকবর খান, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এম এ করিম মিয়া ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল ও অ্যাডভোকেট দেলুয়ার হোসেন।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি একেএম নাছিমুল আখতার জানান, এ মামলা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অজ্ঞাত নারীর মরদেহ হিসেবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। পরে পত্রপত্রিকার খবর দেখে নিহতের ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় তার বোনের ছবি দেখে শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় ছোঁয়া পরিবহনটি জব্দ করে এবং আসামিদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আসামিরা স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম খান সিদ্দিকী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ৩২ জনকে এ মামলায় সাক্ষী করা হয়। গত ৩ জানুয়ারি বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরবর্তীতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, চিকিৎসক, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণকারী চারজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সুরতহাল রিপোর্ট ও জব্দ তালিকায় সর্বমোট ২৭ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। পিপি আরও জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়েছে। পরে বেলা ২টার দিকে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। আদালত আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে মরদেহ ফেলে যায়। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রূপার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করে। গত ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলার আসামিরা প্রত্যেকেই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে রয়েছে।