শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
Homeটাঙ্গাইল জেলাটাঙ্গাইলে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

টাঙ্গাইলে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মা মীম আক্তার (২০) ও তার নবজাতক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের ১ নম্বর অপারেশন থিয়েটারে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. সালমা জাহান ও হাসপাতালের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়ার কনসালটেন্ট ডা. প্রনব কর্মকার গা-ঢাকা দিয়েছে।

মীম আক্তার জেলার ঘাটাইল উপজেলার সিংগুরিয়া গ্রামের হানিফ আলীর মেয়ে ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মদনা গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। গর্ভ অবস্থায় মীম আক্তার বাবার বাড়িতে ছিলেন।

জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী প্রসব বেদনা শুরু হলে মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পরে গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা. সালমা জাহান তার অপারেশন করে। থিয়োটারে নেওয়ার ২০ মিনিট পরই মা ও নবজাত কন্যার মরদেহ বের করে দিয়ে সটকে পড়েন ওই চিকিৎসক।

স্বজনরা অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা. সালমা জাহান তাদেরকে শহরের সোনিয়া নার্সিং হোমে প্রসূতি মীম আক্তারের অপারেশন করাতে বলেন। তারা হতদরিদ্র হওয়ায় এ প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় ওই ডাক্তার সিজারিয়ান অপারেশনের সময় অবহেলা করায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের আরও অভিযোগ, প্রসূতি মীম আক্তার হাটতে হাটতে অপারেশন থিয়েটারে যান। অথচ অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের লাশ বের করে দেওয়া হয়।

মীম আক্তারের নানী সুমনা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সকালে প্রসূতি মীম আক্তারের প্রসব বেদনা ওঠে। তাৎক্ষণিক তারা প্রসূতিকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর (রেফার্ড) করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে প্রসূতি মীম আক্তারকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেন্ট ডা. সালমা জাহানের তত্ত্বাবধায়নে দুপুর ১ টায় প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ২০ মিনিট পর ওই ডাক্তার মীমের পরিবারের কাছে তার জন্য দুই ব্যাগ রক্ত চান। স্বজনরা রক্ত সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে ছুটাছুটি করতে থাকে।

এ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে জানানো হয়- প্রসূতি মীম আক্তার ও তার নবজাতক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেন্ট ডা. সালমা জাহানের খোঁজ করলে তিনি চলে গেছেন বলে জানানো হয়।

মীমের খালা মাজেদা আক্তার জানান, প্রসূতি মীমের মৃত্যুর পর জোর করে হাসপাতালের দুজন নার্স-ওয়ার্ডবয় লাশের ছাড়পত্র কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মা ও নবজাত মেয়ের মরদেহ বের করে দেয়। এসময় হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে নিহতের স্বজনদের হাতাহাতি হয়।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. সালমা জাহান মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুর রহমান ঢাকায় থাকায় তিনি গণমাধ্যমে কোন ধরণের বক্তব্য দিতে পারবেন না। এরপরই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. প্রনব কর্মকারের খোঁজ করলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়- তিনি অনেক আগেই কর্মস্থল থেকে বের হয়ে গেছেন। ডা. প্রনব কর্মকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া জানান, জেনারেল হাসপাতালের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোটের ভিত্তিতে তিনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -