মো: খাইরুল ইসলাম: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া অঞ্চলের রসুলপুর গ্রামে পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে লটকনের চাষ শুরু করেছেন শামছুল আলম মাস্টার। তিনি বাণিজ্যিক ভাবে লটকন চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি তার ১০ একর জমির উপর ৪ হাজার লটকনসহ দেশি-বিদেশী ৫০ জাতের ফলদ গাছ লাগিয়ে উপজেলায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন।
শামছুল আলম একজন শিক্ষানুরাগী হলেও কৃষি কাজের প্রতি রয়েছে তাঁর প্রবল আগ্রহ ও অদম্য প্রচেষ্টা। তিনি ঘাটাইল এস.ই.পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ক সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। কৃষি শিক্ষক হওয়ার সুবাধে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পুথিঁগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে শিক্ষাদানের জন্য প্রথমে ছোট্ট পরিসরে একটি ফলের বাগান করেন। এই ছোট্ট বাগান থেকেই মনে প্রবল আগ্রহ জাগে বাণিজ্যিক কিভাবে ফল চাষ করা।
তিনি স্বপ্ন দেখেন শিক্ষকতার পাশাপাশি স্থানীয় জনবল কাজে লাগিয়ে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কিভাবে কেমিক্যাল মুক্ত ফলের চাষ করে একজন সফল চাষী হওয়া যায়। তাই তার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিনত করার জন্য প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে নিজ হাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন ১০ একর জমির উপর দেশী- বিদেশী প্রায় ৫০ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বিশাল বাগান। এই ফলদ বৃক্ষের মধ্যে ৪ হাজার লটকনের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতের ৯০টি আম গাছ , ৬০টি সৌদি খেঁজুর, ১৬০টি মালটা , ৩০টি কমলা লেবু , ৪০টি বাতাবি লেবুসহ প্রায় ৭ হাজার গাছ । মূলত লটকন, আম ,সৌদি খেঁজুর ও মালটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাই তার মূখ্য উদ্দেশ্য। গত বছর লটকন গাছে সামান্য কিছু ফলন আসলেও চলতি মৌসুমে ফলনের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি আশা করছেন , প্রতিকূ কমলা লেবু আবহাওয়া বিরাজ করলে প্রতি বছর এ বাগান থেকে ৫/৭ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন শামছুল মাস্টার । সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শামছুল আলমের বাড়ির প্রবেশ দ্বারকে সুসজ্জ্বিত করা হয়েছে পামওয়েলের গাছ দ্বারা। নয়নাভিরাম এই দৃশ্য যে কোন পথচারিদেরকে আকৃষ্ট করবে।
বাড়ির সামনে একটু এগুলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে সবুজে সমারোহ একটি সুবিশাল বাগান। এ বাগানটিতে রয়েছে ৪ হাজার লটকনসহ প্রায় ৫০ জাতের দেশি-বিদেশী চেনা-অচেনা হরেক-রকমের ফলের গাছ।দেশি ফলের মধ্যে কমলা, মাল্টা, লটকন, আতা, বাতাবিলেবু, আমড়া, আম, জাম, বারোমাসি কাঁঠাল, ডালিম, বাউকুল, তাল, বেল, আমলকি, কাঠলিচু.গাব,মিষ্টিগাব, চালতা, পিচফল, জামান ফল,চেরিফল, হেমফল, কাউফল, ছফেদা, অরবরই, কলা, আনারস ,জলপাই,করমচা,পেঁপে, জামরুল, কামরাঙ্গা,পেয়ারা, নারিকেলসহ আরো অন্যান্য ফলের গাছ। বিদেশী ফলের মধ্যে রয়েছে- সৌদী খেঁজুর, ফোর কেজি আম ,ড্রাগন ফল, রাম ভুটান, প্লামফল, আলুবুখারা ,ডুরিয়ান ,কিউজাই এবং ব্যানেনা ম্যাংগো। ফলদবৃক্ষ ছাড়াও তার বাগানে রয়েছে সেগুন, মেহগিনি, আকাশ মনি, লম্বু, গর্জন,আগর ,পলাশ, জারুল, তুলশি, শতমূলি,কালোমেঘ,অ্যালোভেরা, এবং পান ,সুপারি ,তেজপাতাসহ বিভিন্ন রকমের বাহারি গাছ । শামছুল আলম জানান, ৬ বছর আগে ফলের এ গাছগুলো লাগানো হয়েছে। চলতি বছর সামান্য পরিমান ফল পেয়েছি , আগামী মৌসুমে ভালো ফলনের আশা করছি। শিক্ষকতার পাশাপাশি তার এই বাগান করার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষি বিষয়ক শিক্ষক হওয়ায় শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের কৃষি বিষয়ে শিক্ষাদান করতে গিয়ে কৃষি বিষয়ে প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এ আগ্রহ থেকেই বাণিজ্যিকবাবে এ বাগান শুরু করি । উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, বাগানটি খুবই চমৎকার। বাণিজ্যিক ভাবে বাগানটি করে তিনি যাতে লাভবান হন এ জন্য বিভিন্ন সময় তাকে সহযোগিতাসহ পরামর্শ দিয়ে আসছি ।