এম সাইফুল ইসলাম শাফলু: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর মনোয়ারা মেডিকেল টেনোলজি কলেজ এন্ড হাসপাতালে শিক্ষার নামে চলছে প্রতারণা। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পাশ^বর্তি এলাকা সহ দেশের দূর দূরান্ত থেকে আসা শত শত শিক্ষার্থী । আর প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এখান থেকে পাশ করার পর তারা পাচ্ছে না সরকারি কোন চাকরি বা মানসম্মত কোন হাসপাতাল চাকরি করার সুযোগ। এমনটিই অভিযোগ করেছেন বিগত সালগুলোতে পাশ করা শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর মনোয়ারা মেডিকেল টেকনোলজি কলেজ এন্ড হাসপাতাল দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। কলেজটির সাথে হাসপাতাল শব্দটি যুক্ত থাকলেও আদৌ গড়ে উঠেনি কোন হাসপাতাল। কলেজটির বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে পাশ^বর্তি এলাকাসহ দেশের দূর দূরান্তের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে ছুটে আসেন। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন গুলোতে ডিপ্লোমা ইন ল্যাব (প্যাথলজি), ফার্মেসী, নাসিং এবং ডেন্টাল ডিপার্টমেন্ট উল্লেখ করা থাকলেও এখানে এর কোনটিই নেই। শুরু লগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে নামে প্রতারণা করে আসছে।
পাশকরা পেশেন্টকেয়ার টেকনোলজিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদেরকে নার্সিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করানোর নামে প্রতারণা করেছে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পাশ করা নার্সিংদের সরকারি চাকরির কোন সম্ভাবনা নেই। এদিকে প্রাইভেট কম্পানিগুলো নাসিং কাউন্সিলের রেজিস্টেশন ছাড়া তাদেরকে গ্রহন করছে না। ছোট খাট চাকরি জুটলেও অসম্মান এবং চরম হতাশা নিয়ে তাদেরকে জীবিকা নির্ভর করতে হচ্ছে। একই অবস্থানে রয়েছে বিগত সালগুলোতে পাশকরা ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা। ইতিপূর্বে বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট পরির্তন করে নতুন সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, এমনটিই জানিয়েছে কলেজটি। মূল সার্টিফিকেট জমা নিয়ে পাশকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা। সার্টিফিকেট পরিবর্তনের নামে দেওয়া হচ্ছে প্রত্যায়ণ পত্র এবং মূল সার্টিফিকেট এর অপর পৃষ্ঠায় সিলমোহর সহ বোর্ডের উর্ধতম কর্মকর্তাদের সাক্ষর। এটাও প্রতারণার নতুন একটা ফাঁদ বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কলেজটির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে চতুর্থ ব্যাচ এর শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার জানান, তাদেরকে সরকারি চাকরি সহ প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে উন্নত চাকরির সুযোগ-সুবিধা দেখিয়ে নার্সিং ডিপার্টমেন্ট ভর্তি করানো হয়। পরে তাদেরকে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিতে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলে পেশেন্ট কেয়ার এবং নাসিং একই বিষয় বলে তাঁরা জানান । কলেজের সাথে হাসপাতাল যুক্ত থাকলেও এখানে নেই কোন হাসপাতাল। মেডিকেলের মত গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে অযোগ্য ডিপ্লোমাধারী টিচার দিয়ে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশকরা শিক্ষার্থীদের দিয়েও ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তুলেন সুলতানা। সুলতানা আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাথে প্রতিনিয়তই প্রচারণা করেছে। তাঁরা সরকারি চাকরিতে কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, এবং কি মানসম্মত প্রাইভেট হাসপাতাল, কম্পানিগুলোও তাদেরকে গ্রহন করছে না।
২০১৬ সালে নাসিং ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশকরা শিক্ষার্থী বিলকিস আক্তার বলেন, মনোয়ারা মেডিকেল টেকনোলজি কলেজ আমাদের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা অর্জনের নামে নতুন করে কেউ যেন প্রতারিত না হয় এমনটাই দাবি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের।
বর্তমানে অধ্যয়নরত বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ক্লাসগুলো পরিচালিত হচ্ছে বেশির ভাগ ডিপ্লোামাধারী শিক্ষক দিয়ে। তাদের ১ম ও ২য় সিমিস্টারে জীববিজ্ঞান এবং রসায়নের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো নিয়েছে তাহমিনা নামের একজন শিক্ষিকা। যার শিক্ষাগত যোগ্যতা মেডিকেল ডিপ্লোমা। এছাড়া এনাটমি, ফিউজোলজির মত গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল ক্লাসগুলো নিচ্ছে ডিপ্লোমাধারী শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র বর্মণ। কোন ব্যবহারিক কাজ দেখাতে শিক্ষার্থীদের কোন ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি, কলেজে কোন প্রকার ল্যাব আছে কিনা তাও তাদের জানা নেই।
জরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, নির্দিষ্ট কোন ভবন না থাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে ভবন ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপালের নাম জানতে চাইলে তারা কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা মিজানুর রহমান মাসুদকে প্রিন্সিপাল হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম অনুযায়ী মিজানুর রহমান মাসুদের কোন যোগ্যতাই নেই প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল হবার, এমনটিই জানিয়েছেন ভিন্ন একটা প্রতিষ্ঠান সূত্র।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্রে পিন্সিপালের সাক্ষরের জায়গায় মিজানুর রহমান মাসুদের সাক্ষর পাওয়া গেলেও বেশ কিছু কাগজপত্রে ভিন্ন একটা সাক্ষর পাওয়া গিয়েছে। পিন্সিপাল হিসেবে কে সেই ব্যক্তি, এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজের অফিস সহকারী হালিমা বেগম জানান, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। আমি কোন পোষ্টে আছি সেটাও আমি সঠিক জানি না। প্রতিষ্ঠানটির পিন্সিপাল হিসেবে কে দায়িত্বে আছেন? বর্তমানে কার অধিনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা হচ্ছে? সেটিও তিনি জানেন বলে দাবি করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিজান স্যারের কাছ থেকে সব প্রশ্নের জবাব জেনে নিতে অনুরোধ করেন।
একাধিকবার প্রতিষ্ঠানে গিয়েও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তথাকথিত প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান মাসুদকে পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানাযায় তিনি বর্তমানে একই জেলাধীন ঘাটাইলে রয়েছেন। ঘাটাইল আরো দুটি প্রতিষ্ঠানে তিনি প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।