নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢল ও কয়েকদিন আগের বৃষ্টির কারনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সাত দিনে নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারনে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত হয়েছে।
জেলার যমুনা তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের মাহমুদনগর গ্রাম, কুকুরিয়াসহ ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা, বরুয়া, কুঠিবয়ড়া, জগৎপুরা, তারাই, বলরামপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যমুনার পাড়ের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, যমুনার পানি বাড়ার কারনে বসতি ভিটা, স্কুল মাদ্রাসা, মসজিদ, রাস্তা-ঘাট নদীর গর্ভের চলে গিয়েছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নৌকার মাধ্যমে এক বাড়ি হতে আরেকবাড়ী যাতায়াত করছে। যমুনার পাড়ে স্থায়ী বেড়িবাধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ে দেখা যায়, বসতি ভিটা নদীর গর্ভে যাওয়ার কারনে অনেকেই রাস্তার পাড়ে আবার অনেকেই অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। ঘর ভেঙ্গে এনে রাস্তা পাড়ে ছাউনি তুলে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। অযত্ম আর অবহেলায় রয়েছে গৃহপালিত পশু-পাখি। আবার অনেকেই নৌকার মধ্যে রাত্রি যাপন করছে। অন্যদিকে যমুনা নদীর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষনিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের মাহমুদনগর গ্রাম, কুকুরিয়াসহ ভূঞাপুর উপজেলার কুঠিবয়ড়া এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের কুকুরিয়া এলাকার মো. হানিফ বলেন, বন্যার কারনে আমাদের বসতি ভিটা, রাস্তা ঘাট, মসজিদ নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে। রাস্তার পাড়ে ছাউনি তুলে পরিবারের সদস্য নিয়ে গাদাগাদি করে থাকি। সরকার যদি স্থায়ীভাবে বেড়িবাদ করে দিতো তাহলে আমাদের আর বাড়ি ছাড়া হতে হতো না।
মো. আফছার মিয়া বলেন, বন্যা শুরু হলেই ভাঙ্গন দেখা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ দেওয়ার কারনে কম ক্ষতি গ্রস্থ হয়। তবে বন্যার আগে যদি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করে তাহলে বন্যার সময় নদীতে ভাঙ্গনের দেখা দিবে না। আমাদেরও কোন ক্ষতি হবে না।
ভুঞাপুর উপজেলার কুঠিবয়ড়া এলাকার মো. হালিম সরকার বলেন, গত সাত দিনে যমুনা অনেক পানি বেড়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সরকারের কাছে যমুনার পাড়ে স্থায়ী বেড়ীবাদের দাবি জানাচ্ছি।
একই এলকার মো. খলিল মিয়া বলেন, আমার ফসলি জমি ও ভিটেবাড়ী নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে। খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিগ্রী চর ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আমি কুঠিবয়ড়া এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন কুঠিবয়ড়া বাজারও হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা এখন কই গিয়ে আশ্রয় নেবো। সরকারের নিকট স্থায়ীভাবে বেড়িবাধের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম এডভোকেট বলেন, কয়েকদিন যাবত উপজেলার অর্জুনা, বরুয়া, জগৎপুরা, তারাই, বলরামপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে বিষয়টি গত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে থেকে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। যা ভাঙ্গন রোধে কাজ করবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, টাঙ্গাইলের অংশে যমুনার পানি বিপদ সীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। পানি গতি কম থাকায় আশা করছি পানি আর বৃদ্ধি পাবে না। জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনরোধে তাৎক্ষনিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম বলেন, ভাঙ্গনের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে এসেছি। ভাঙ্গনরোধে তাৎক্ষনিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানো হবে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।