নিজস্ব প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের জমি দখলের মহোৎসব চলছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী ব্রিজের উত্তর পাশের প্রায় তিন একর জমি দখল হলেও সওজ কর্তৃপক্ষের নীরবতায় হতাশ স্থানীয়রা।
ইতোমধ্যে জবরদখলের দেড় একর জমিতে অবৈধ বাজার নির্মাণ করেছে ভূমিদস্যু চক্র। স্থানীয়রা বিষয়টি বারবার সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে অবহিত করলেও সওজ কর্তৃপক্ষ এর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী ব্রিজের উত্তরে পূর্ব পাশের ফটিকজানি মৌজায় সওজের প্রায় দেড় একর জমি জবরদখলের মাধ্যমে ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পূর্ব পাশে ৪১টি ও পশ্চিম পাশে ৮টি দোকান নির্মাণ করে বাজার গড়ে তোলা হয়। বাজারের পূর্ব পাশে ১৩ জন ও মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ৫ জন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব জমি ভোগদখল করছে। হযরত আলী (৬০), বুলবুল ইসলাম (৩৬), আমীর আলী (৬৩), দুলাল হোসেন (৩৬), আলমগীর হোসেন (৩০) ইতোমধ্যে প্রায় দেড় একর সরকারি জায়গায় জবর দখল করে ৮টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
এছাড়া এ বাজারে পূর্ব পাশে নির্মাণে রয়েছেন ফটিকজানী মৌজায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পৌলী বাজারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের জায়গায় হাজী আলাউদ্দিন (৫৫) ২০টি দোকানঘর, আব্দুল মান্নান (৪৫) চারটি, হিন্নাইপাড়া গ্রামের আমজাদ (৪০) তিনটি, ফটিকজানীর হবিবর রহমান হবি (৭০) তিনটি, তারা ডাক্তার (৬০) দুইটি, লালন (৪০) দুইটি এবং ফটিকজানী গ্রামের ফজলু মুন্সী (৪৫) একটি, মহেলা গ্রামের ইস্রারাফিল (৩৫), তোফাজ্জল হোসেন (৪০), মান্নান মুন্সী (৬২), জুয়েল মোল্লা (৩৫), মুন্নাফ আলীর (৫০) একটি করে দোকান।
এ জমি দখলদারদের নিয়ন্ত্রণ আর ভাড়াটিয়া দ্বারা নির্মাণাধীন বাজারের দোকানগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে পূর্বপাশে জবরদখলকৃত সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করে কতিপয় ব্যক্তি ভাড়া দিয়ে একটি অবৈধ মার্কেট নির্মাণ ও মহাসড়কের পূর্বপাশে ফটিকজানী মৌজায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা ‘পৌলী বাজারে’ স্থানীয় এই প্রভাবশালীরা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। তবে তারা দোকানঘরগুলো নিজেরা ব্যবহার না করে ও স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে জামানত নিয়ে রীতিমতো মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের কয়েকজন ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী জানান, তারা ১-২ বছরের জন্য জামানত দিয়ে মাসিক ভাড়ায় দোকান পরিচালনা করছেন। যাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন তারা এসব দোকানের মালিক না হলেও জমির দখলদার ও স্থাপনার মালিক। এ কারণেই নির্মাণাধীন বাজারের দোকান মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েই তাদের ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।
পৌলী বাজার কমিটির সভাপতি জমির উদ্দিন আমিরী জানান, এলাকার মানুষের আগ্রহই সওজের এ জমির ওপর ছোট একটি বাজার আপনা-আপনি গড়ে উঠেছিল। তবে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হাজী আলাউদ্দিন সওজের ৭০ শতাংশ জমি জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
এছাড়াও তিনি দখলকৃত ওই জমিতে ২০টি দোকান নির্মাণ করে ও জামানত নিয়ে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছেন। তবে তিনি বাজারটি ঠিক রেখে জমি জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে হাজী আলাউদ্দিন জানান, পূর্বপাশে রেল লাইন ও পশ্চিমপাশে মহাসড়ক মাঝখানে সওজের ফাঁকা জমিগুলো অত্যন্ত নিচুঁ। তিনি মাটি ভরাট করে ঘর উত্তোলন করে জনগণের স্বার্থে নামমাত্র মূল্যে ভাড়া দিয়েছেন। এলাকার স্বার্থে এই বাজার প্রতিষ্ঠা করাকে তিনি উন্নয়ন দাবি করেছেন। এ বাজার নির্মাণে তিনি কোনো কিছু গোপন করেননি। এছাড়া সওজ এ জমিগুলো যেমন ব্যবহার করছে না তেমনি কোনো তদারকিও রাখছে না বলে জানান তিনি।
এলেঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র সুকুমার ঘোষ জানান, জবরদখল করার শুরুতে এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সওজকে বারবার জানানো হয়েছে। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ দখলরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সওজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, তিনি বিষয়টি জানেন না। সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।