নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সালিশি বৈঠকে এক সাংবাদিকের ভাইকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই সাংবাদিকের ভাই ও জমির মালিক বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল মডেল থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে অভিযোগটি তুলে নিতে সান্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নানা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগপত্র ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বার্থা গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী মোছা. ফরিদা বেগম(৫৫) ও তাঁর দেবর মো. বারেক খানের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জমির ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে তিন দফায় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাতাব্বরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিশি করলেও বারেক খান মেনে না নিয়ে জোরপূর্বক তাঁর ভাই মৃত আব্দুর রাজ্জাক খানের জমি ভোগ দখল করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে খালেক মাতাব্বরের বাড়ির সামনে সালিশি বৈঠকের দিন ধার্য করেন তাঁরা। সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ২ নং গালা ইউনিয়নের সাবেক (ইউপি) চেয়ারম্যান আতোয়ার, প্যানেল চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান খান তন্ময়, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য রোকসানা বেগম, স্থানীয় মাতাব্বর খালেক ওরফে নিশান, সিদ্দিকুর রহমান (সিদ্দিক), হাসেন, হায়দর, আনিছ শিকদার, হাসমত মিয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ভোরের বার্তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সাপ্তাহিক গণবিপ্লব’র চীফ রিপোর্টার মো. আল-আমিন খান’র পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল হোসেন খানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বারেক খান ও তাঁর পরিবার।
সাংবাদিক আল-আমিন খানের বড় ভাই এর প্রতিবাদ করলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে বারেক খানের ছেলে বেল্লাল হোসেন খান লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে নাকের উপড়ের অংশে কেটে যায়। স্থানীয়রা গুরুত্বর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাঁকে চিকিৎসা দেয়ার পর টাঙ্গাইল মডেল থানায় চারজন ও মৃত আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী ফরিদা বেগম ওই চারজনসহ আরও দুইজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন-সদর উপজেলার বার্থা গ্রামের মৃত আবুল হোসেন খানের ছেলে মো. বারেক খান(৫৫), তাঁর ছেলে মো. বেল্লাল হোসেন খান(২৮), তাঁর স্ত্রী বেলা বেগম(৫০), মো. জীবন মল্লিক ওরফে গেন্দীর স্ত্রী মোছা. শাহিনা বেগম(২৬)। একই এলাকার মোকাদ্দেস ওরফে লালে (৬০), তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম(৫২)।
এদিকে অভিযোগটি তুলে নিতে সন্ত্রাসী দিয়ে অভিযোগকারীদের নানা ভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে বাদি পক্ষ জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানায়, বারেক খানের ছেলে বেল্লাল খান মাস্তান টাইপের লোক। এমন কোন কাজ নাই তিনি করতে পারে না। তিনি এখন বিদেশে থাকেন। বিদেশে যাওয়ার আগে তিনি গ্লাসের (থাই) কাজের পাশাপাশি চাঁদাবাজী, মাস্তানি, মাদক বিক্রয়ীসহ সরকার বিরোধী কার্যক্রম করতেন। এনিয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) একাধিকবার গ্রেপ্তার করলেও জামিনে বা প্রভাবশালী নেতার ক্ষমতায় বেড়িয়ে আসে। এখন বিদেশে গিয়ে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসা করে আসছে বেল্লাল খান। যা অর ব্যবহিত মোবাইলের হিস্টোরি ও কোকী চেক করলেই বেড়িয়ে আসবে এর মূল তথ্য।
কামাল হোসেন খান জানায়, লেয়াকত খানের দোকান সংলগ্ন এলাকায় বারেকের স্ত্রী ও তাঁর ছেলে বেল্লাল খান বলে যায় জামাল খান, কামাল খান ও তুফাজ্জল হোসেন খানকে জুদি সালিশে কথা বলতে শুনি তাহলে সেখানে তাঁদের লাশ পড়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, সালিশের মধ্যে আমার বাবা কথা বললে বেল্লাল আমার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এর প্রতিবাদ করলে আমাকে বেল্লাল ঝাপটে ধরে ও বারেক আমাকে কিল, ঘুষি দিতে থাকেন। এক পর্যায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেল্লাল লোহার রড দিতে আঘাত করেন এবং আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়।
আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী মোছা. ফরিদা বেগম জানায়, আমার বসতবাড়ির কিছু অংশ জোর পূর্বক বেদখল করে রাখছে বারেক। বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মাতাব্বররা সালিশ করলে তাঁরা তা মানেন না। এ নিয়ে এনিয়ে শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকালে সালিশের আয়োজন করলে বারেক খান ও তাঁর পারিবার ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতাব্বরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ও আমার পরিবারকে খুন করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেয়।
অভিযুক্ত বেল্লাল খানের সেল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
২ নং গালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজকুমার সরকার ও প্যানেল চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান খান তন্ময় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, নিরীহ বিদবা মহিলার জমিনিয়ে সালিশ চলাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জামাল হোসেন খান তাঁদের জমি সংক্রান্ত কথা বললে বারেক খান ও তাঁর পরিবার অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারতে আসলে তাঁর ছেলে কামাল খান বাঁধা দেয়। এসময় তাঁর মুখে আঘাত করলে সে গুরুত্বর আহত হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা আরো বলেন, বেল্লাল নামের ছেলেটা খারাপ প্রকিতির লোক।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক ভূঁইয়া জানায়, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে দুষিদের বিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।