নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মধুপুরে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ কারণে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে টাঙ্গাইল অংশে চারটি স্থায়ী চেকপোস্ট এবং মধুপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, সখীপুর এবং মির্জাপুর উপজেলায় ১৬টি স্থানে প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর বনাঞ্চলের নির্জন এলাকায় গত ১৩ বছরে চারবার চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
খুন হয়েছেন দুই নারী। এর বাইরেও ছোটখাটো অনেক ঘটনা ঘটে।
এগুলো খুব একটা জানাজানি হয় না। এই এলাকাটি নির্জন হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই পালাতে পারছে বলে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনটি রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। রাতে নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে যাত্রী ওঠানোর নিয়ম না থাকলেও রাত ১১টায় সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথমে চারজন এবং পরে দুই বার তিনজন করে ছয়জন বাসে ওঠেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা পার হওয়ার পর ১০ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে বাসের ২৪ যাত্রীকে জিম্মি করে ফেলে। এসময় ডাকাতরা পুরুষ যাত্রীদের পরনের কাপড় খুলে ও নারী যাত্রীদের জানালার পর্দা দিয়ে হাত, পা, মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে মারধর করতে থাকে।
এরপর নয়জন ডাকাত যাত্রীদের সিটের সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরে তারা কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবার মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুটে নেয়। বাসটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে গাজীপুর থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী ঝটিকা সার্ভিসের চালক ডাকাত দলের সদস্য বাসটির মূল চালককে সরিয়ে তিনি চালকের আসনে বসে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর বাসটি গোড়াই এলাকায় মহাসড়কে ইউটার্ন নিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতে থাকে। রাস্তায়ই গাড়ির মধ্যে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে ডাকাতরা। এরপর থেকেই একে একে ১১ ডাকাতকে গ্রেফতার করে আইনশৃংখলাবাহিনী। পরবর্তীতে গ্রেফতার সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আদালতে। বর্তমানে তারা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে সড়কে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ সংঘঠিত না হয় এজন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহসড়ক এবং আশেপাশের আঞ্চলিক সড়কগুলোতে স্থায়ী চেকপোস্ট ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ১৬টি স্থানে নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। এসব স্থানগুলোতে সন্দেজনক যাত্রীবাহী বাস, গরু ভর্তি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি এবং ভিডিও ধারণ করে রাখা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. সরফুদ্দিন জানান, সাধারণ যাত্রীরা যেন নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে লক্ষে্য টাঙ্গাইলের বিভিন্ন অংশে চেকপোস্ট স্থাপন ও সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত নিয়মিত পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক, আনালিয়াবাড়ি, এলেঙ্গা মোড়, আশেকপুর, বাসাইল বাইপাস, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া, দেওহাটা ওভার ব্রিজের পাশে, মির্জাপুর থানা মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।
এছাড়া চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
ময়মনসিংহগামী প্রান্তিক পরিবহনের যাত্রী সোলায়মান হাসান জানান, ব্যবসার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুদিন টাঙ্গাইল আসতে হয় তাকে। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন করায় আগের চেয়ে এখন বেশ নিরাপদে বাসে যাতায়াত করতে পারছেন। এভাবে পুলিশি টহল ও যানবাহন তল্লাশি অব্যাহত থাকলে সড়কে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিনিময় পরিবহনের নারী যাত্রী আকলিমা আক্তার বিথী বলেন, টাঙ্গাইল শহরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার অফিসের কাজ শেষ করে গ্রামের বাড়ি ধনবাড়িতে যাই। মহাসড়কের এলেঙ্গা লিং রোডের পর পুরো রাস্তায়ই নেই কোনো সড়ক বাতি। চারিদিকে অন্ধকার। এছাড়া ছিল না কোনো পুলিশি টহল। এ কারণে আগে অনেক সময় মনের ভেতর একটা ভয় থাকতো। কিন্তু বর্তমানে সড়কটিতে পুলিশ টহল জোরদার করায় একটু স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারছি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মহাসড়কের চারটি স্থানে স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করার পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন। এছাড়া নির্দিষ্ট রুটের বাস অন্য রুটে প্রবেশ করলেই সেটি তল্লাশি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেই বাসটির সকল যাত্রী ও চালকের ভিডিও করে রাখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের পাশাপাশি গাড়ির চালকদের বেশি সচেতন হতে হবে। যাতে করে তারা নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া বাসে কোনো যাত্রী ওঠানামা না করেন।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।