সম্পাদকীয় : প্রায় বিশ বছর আগে দেশে প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছিল ডেঙ্গু রোগীর। ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় একশ মানুষ। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সাধারণের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের আতঙ্ক দূর করতে এবং ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা ধ্বংসে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের সেই উদ্যোগের সফলতাও আসে। পরবর্তী বছরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই সারাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাজধানীসহ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর মিলছে। সংবাদপত্রে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বেশিরভাগ হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। ফ্লোরে রেখেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই রেকর্ডসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নতুন ৬০০ রোগী। যার ফলে চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এই সংখ্যাকে মশাবাহিত রোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই নয়, এবারে চট্টগ্রাম, ফেনী, সাতক্ষীরা ও গাইবান্ধাতেও দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডেঙ্গুর ব্যাপকতা নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীও চিন্তিত বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। রোগীরা যেন সুচিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা মনে করি, ডেঙ্গুর ব্যাপকতায় এখন প্রয়োজন সবার সমন্বিত উদ্যোগ। পরিকল্পিত এবং সমন্বিত উদ্যোগ না হলে কোনোভাবেই মানুষকে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। মশা নিধন কর্মসূচিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে নিজ উদ্যোগে বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন যেমন রাখতে হবে, তেমনি সবার সমন্বিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ড্রেন, নালা, খাল, জলাশয় ও মজা পুকুর পরিষ্কার করে মশার আবাস এবং বংশবিস্তার স্থান ধ্বংস করতে হবে। একইভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় দেশের সব হাসপাতালের মধ্যেও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে সেই সেবা যেন রোগীরা যথাযথভাবে পায় তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতেও যেন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যয় একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গুর ব্যাপকতায় হাইকোর্ট এডিস মশা নির্মূলে একবারের পরিবর্তে তিনবার বা পাঁচবার ওষুধ স্প্রে করার জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে যে নিদের্শনা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মনে করি, কারও একার পক্ষে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা মোকাবেলা করা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ জরুরি। তাই সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে যারা যারা সম্পৃক্ত তাদের সবার প্রয়াসই এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সারা দেশে মশা নিধন এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধকল্পে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতাই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি।