সোমবার, মার্চ ২০, ২০২৩
Homeআমাদের টাঙ্গাইলতারাবুড়ি (ছোট গল্প),,,,, সাহিদা খান বর্ষা

তারাবুড়ি (ছোট গল্প),,,,, সাহিদা খান বর্ষা

তারাবুড়ি (ছোট গল্প)
সাহিদা খান বর্ষা

মধ্যরাতে তারাবুড়ির কান্নায় ঘুম ভেঙে যায় কমলার।যখন তখন এই কান্দনে খারাপ হয়ে যায় মন তারাবুড়ির জন্য।আবার ঘুমের ব্যাঘাতে কপাল কুঁচকে যায় বিরক্তিতে।কমলা উঠে নেভানো কুপি খুঁজতে থাকে। কুপি জ্বালিয়ে বুড়ির ঘরের দিকে এগুয়।
তারাবুড়ির ঘরের দরজা ভেজানো ভিতরে নিকষ অন্ধকার কমলার কুপির আলোয় বুড়ির ঘরের নিকষ অন্ধকার কেটে যেতে থাকে।
-চাচী ও চাচী আবার কানতাছেন এ্যামনে করলে অসুকে পড়বেন। এত কান্দি তাওতো কান্দন ফুরায়না বিশ বছর বাপ আমার চইল্যা গ্যাছে,আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বুড়ি কই গেলিরে বাপ আমারে রাইখ্যা। কমলা অনেক বুঝিয়ে কান্না থামায়।কমলা বুড়ির দূরসম্পর্কের দেবরির মেয়ে। বুড়িকে অনেক যত্ন করে। বিয়ে হয়েছিল পাশের গ্রামে, বছর না ঘুরতেই বিধবা হয়ে চলে এসেছে বাবার বাড়ি।ওর বেশি সময় কাটে চাচীর সাথে পুরনো দিনের কথা শুনে।সে কথাগুলোতে তারাবুড়ির কথাই বেশি কারণ ওর এক বছরের কথা গুলো শেষ হয়ে গেছে।কমলার মা নছিরন বেগম তারাবুড়িকে খুব যত্ন করে অনেকবার বলেছে
-বুজি আপনে আমগো লগে খাইবেন বুড়ি রাজি হয়নি।নিজেই রান্না করে খায়। অবশ্য কমলার বাবাই হাটবারে সদাইপাতি এনে দেয়।তারাবুড়িও মাঝে মাঝে শাকপাতা তুলতে বিলে নামে বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই তবে হাঁটাচলায় তঁার ক্লান্তি নেই।
তারাবুড়ি চৌদ্দ বছর বয়সে তালুকদার বাড়িতে বউ হয়ে আসে।পাড়া প্রতিবেশিরা বলল এত সুন্দর বউ আনিস তালুকদার কই পাইল।আনিস তালুকদারের এক মা ছাড়া কেউ নাই।তবে হাঁসমুরগি, গরুছাগল, রাখাল কাজের মানুষ দিয়ে ঘর ভর্তি যাকে বলে ভরা সংসার, জমিজমাও অনেক। আনিসের ভরা সংসার এ বউ এসে সব এক হাতে রপ্ত করে নিয়েছে শ্বাশুড়ি র সাথেও ভালো বনিবনা।আনিসের বুক ভরা প্রশান্তি। সংসারের সব কিছুতেই ওর ভাললাগা কাজ করে আর বউকেও আনিস ভালবাসতে শুরু করেছে ” ওর”সবকিছুই হাঁটাচলা, কথা বলা,আচার-আচরণ ‘ওকে ‘ মুগ্ধ করে তাইতো কাজ ফেলে বিভিন্ন ছুতায় বাড়ি চলে আসে।আনিস তালুকদার বউ এর মাঝে অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্নতা দেখতে পায়।রাত হলে কাজ শেষে দাওয়ায় বসে তারা দেখে আর চাঁদনী রাত হলে কথাই নেই ঘন্টার পর ঘন্টা দাওয়ায় বসে থাকে।এজন্য আনিস আদর করে তারাবউ বলে ডাকে।গরু,ছাগল
হাঁস, মুরগীকে খেতে দিতে যেয়ে ওগুলোর সাথেও কথা বলে।হাঁস মুরগির বাচ্চা কোলে নিয়ে আদর করে। ভোরবেলা দাওয়ায় মুড়ি ছিটিয়ে রাখে পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায় পাখিরা খেতে আসে, সেসময় হাঁস মুরগী যাতে না আসতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখে। চড়ুই দোয়েল শালিক, ঘুঘু এবং নাম না জানা দু একটি। ফুল গাছের প্রতিও ওর দুর্বলতা, তাই আনিস, চৌধুরীদের বাড়ি থেকে কিছু ফুল গাছ এনে দিছে।তাঁরাবউ পানি দেওয়ার সময় ও ফুল গাছের সাথে কথা বলে।এসব নিয়ে সবাই মজা পায়। সংসার সামলিয়ে এসব করে তাই শ্বাশুড়ি র সাথে বিরোধ হয়না।
তারাবউ এর কোল আলো করে ছেলে এল নাম রাখলো দুলাল।তারাবউ আর আনিস এর মনে হতে লাগলো তাদের সংসারে সুখ যেন উপচে পরছে।এদিকে শ্বাশুড়ি মাড়া গেছে অনেক বছর।একদিন দুপুরে বুকে ব্যাথা নিয়ে বাড়ি এলো আনিস কিছু বোঝার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেল।
এখন দুলাল বাইশ বছরের টগবগে যুবক, বাবার মতোই মানুষকে ভালবাসে।এ বছর অনেক বন্যা হয়েছে চারিদিকে অথৈ পানি।পাশের গ্রামে গেল ওর বয়সী কয়েকজন মিলে ত্রান দিতে, ফিরে আসার সময় পাকে পড়ে নৌকা তলিয়ে গেল।দুলাল ও আরেক বন্ধু মারা গেল।তারাবউ পাগলের মতো হয়ে গেল।এদিকে যমুনার ভাঙনও শুরু হয়ে গেছে।সবাই বলাবলি করছে এবার আার গ্রাম থাকবোনা যমুনায় চইল্যা যাইবো।গ্রামের সবাই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।তারাবউ বাড়ি ধরে আঁকড়ে বসে আছে।কারও কথাই শুনছেনা ভাইয়েরা নিতে আসছে গেলনা।একদিন রাতে বড়ঘর,বৈঠকখানা নদীতে চলে গেল।দূরসম্পর্কের দেবর তালেব আলির বাড়িতে চলে এল। বিলের ধারে তার ছোট একটি বাড়ি উঠল।তখন থেকেই তার কান্না শুরু হল।তারাবউ থেকে কখন যে তাঁরাবুড়ি হয়ে গেল নিজেই জানেনা।
কমলা বলল চাচী ঘুমান।
– নারে মা এখন ই আযান দিব, অজু কইরা আসি।
কমলা চলে যায়,তারাবুড়ি নামাজ পড়ে তক্তা দিয়ে ব্রেন্চের মত করা হয়েছে ওখানে এসে বসে।আকাশ ফর্সা হতে শুরু করেছে আলোআঁধারিতে বিলটাকে অচেনা মনে হয়। পাশের বটগাছটা থেকে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে তার মনে হয় স্বপ্নে বাস করছে অন্যরকম ভাললাগায় ভরে যায় মন।কষ্ট আর কান্না কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায়।
তারাবুড়ি এখনো দাওয়ায় বসে আকাশে র তারা দ্যাখে, আগে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকত।এখন
বিড়বিড় করে বলে মানুষ মরে গেলে কি তারা হয়ে যায়?তাহলে কোন তারা টা আমার স্বামী কোন তারা টা আমার সন্তান এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে…..

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -