নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ এবং অতিসাধারণ মানুষ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়েছে কিন্তু কমার কোনো প্রভাব পড়েনি। যখন তেলের দাম বেড়েছিল তখন নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছিল আর কমেনি।
বাংলাদেশে একবার জিনিসের দাম বাড়লে তা কমার রীতি-রেওয়াজ নেই। দেশের ব্যবসায়ীরা আসলে এমনই। তাদের কোনো মায়ামমতা নেই। মানবিকতা নেই। বিবেক-বিবেচনা নেই। নেই কোনো নীতি-নৈতিকতা। জিনিসের দাম এক টাকা বাড়লে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেয় ১০ টাকা। দেশের সাধারণ মানুষ তাদের হাতে জিম্মি। কী কারণে যেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জিম্মিদশাটা কাটছে না।
জিনিসপত্রের দামের চলমান ঊর্ধ্বগতি দেশের সাধারণ মানুষকে হতভম্ব করেছে। করেছে হতবাক। কারও মুখে কোনো কথা সরছে না। সংগ্রাম-সাধনার কমতি নেই। তারপরও পারছে না। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার সাথে দৌড়াতে গিয়ে সবাই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই। যত চিন্তা, যত ভাবনা, যত মাথাব্যথা-সবই সাধারণ মানুষের। জিনিসপত্রের বেসামাল দামে তাদের নাভিশ্বাস।
বাংলাদেশে সবই সম্ভব। কারণ সব অসম্ভব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। সুজলা-সুফলা-শস্য শ্যামলা সোনার বাংলাকে তামার বাংলায় পরিণত করার মানুষের অভাব নেই। মীরজাফর, মোশতাক, ফারুক, রশীদেরও কমতি নেই স্বাধীন বাংলাদেশে। এই দেশের মানুষ সবাই স্বাধীন। সবচেয়ে বেশি স্বাধীন ব্যবসায়ীরা। তাদের স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যারপরনাই তারা বেপরোয়া। ইচ্ছামতো বাড়ায় জিনিসপত্রের দাম। কেউ তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানবিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল এই অজুহাতে বাড়ানো হয়েছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমেছে কিন্তু বাংলাদেশে জিনিসের দাম কমানো হচ্ছে না। কী কারণে কমানো হচ্ছে না তার জন্য কারো কাছে জবাবদিহিও করছে না ব্যবসায়ীরা। বরং তারা দাম আরও বাড়ানোর ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। কোনো মহল থেকেই তাদেরকে কোনোরকম সতর্ক করা হচ্ছে না। কী কারণে ব্যবসায়ীরা এত বেপরোয়া দেশের সাধারণ মানুষ তা জানতে চায়। ডিমের দাম সরকার বাড়িয়েছে শতকরা তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা। ব্যবসায়ীরা গায়ের জোরে বাড়িয়ে দিয়েছে শতকরা চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ টাকা। তাদের গায়ে এত জোর কেন ? এই জোরের উৎস কোথায় ? তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। এক টাকার জিনিস ১০ টাকায় কত দিন কেনা যায় ? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। তা না হলে টেনশন- পেরেশানিতে ভুগতে ভুগতে ওপারে চলে যাবে সাধারণ মানুষ।
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আছে। অথচ দেশের মানুষ বলছে তাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তাহলে কোনটা সঠিক ? নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে গেলে মানুষের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। প্রত্যেকের চেহারায় পাওয়া যায় টেনশন-পেরেশানির ছাপ। নীতিনির্ধারকরা কেন যেন বিষয়টা বুঝতে চাচ্ছে না কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান করছে। দ্রব্যের বাজারে দাউদাউ আগুন জ¦লছে আর সরকারি কর্মকর্তারা এসি রুমে বসে ঠান্ডা বাতাস খাচ্ছে। বিষয়টা যে কতটা অমানবিক আর দায়িত্বজ্ঞানহীন তা ব্যাখ্যা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
এই যদি হয় অবস্থা তাহলে মানুষ টিকে থাকবে কীভাবে? কীভাবে চালাবে জীবন, সংসার, পরিবার-পরিজন? তাদের জীবনভাবনা, জীবনদর্শন সত্যিই করুণ। এই করুণ জীবন থেকে বের হবার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। কে দেখাবে তাদের পথের দিশা ? ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি সাধারণ মানুষ একদিন যদি ক্ষেপে যায় তাহলে তাদেরকে সামাল দেবে কে ?
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দিন খুব বেশি দূরে নয়। যেকোনো সময় সাধারণ মানুষ নেমে যেতে পারে রাস্তায়। আক্রমণ করতে পারে দুর্নীতিবাজ-অসাধু ব্যবসায়ীদের আস্তানায়।
মানুষের সহ্য-ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পাকও পছন্দ করে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সীমা লঙ্ঘন করতে করতে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। এবার নিশ্চয় তাদের শাস্তি পাবার পালা। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। দ্রব্যের দাম অযথা না বাড়িয়ে স্থিতিশীল রাখা ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ উভয়ের জন্যই হবে মঙ্গলের, কল্যাণের।
ওপরওয়ালা যদি রহম করেন তাহলে ব্যবসায়ীদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা মানুষকে আর হয়রানি না করে কিছুটা হলেও শান্তি স্বস্তি দেবে। নিত্যপ্রয়োনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে সামান্য হলেও মানবিকতার পরিচয় দেবে। মানুষ যেন সীমিত আয়ে সীমিতভাবে জীবন চালাতে পারে সে ব্যবস্থা করবে। দেশের মানুষ অসহায় অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
হায় রে দুনিয়া! হায় রে মানুষ! হায় রে ব্যবসায়ী! ধিক, শতধিক অসৎ ব্যবসায়ীকে। জীবন নিয়ে যারা জুয়া খেলে তারা আসলে মানুষ নামধারী অমানুষ। বাংলাদেশ আজ তাদের খপ্পরে। দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া করে তারা মুনাফা লোটে। সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামভেজা টাকায় গড়ে তোলে অট্টালিকা। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার পাহাড়। একেকজন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে একেকটা টাকার কুমির। খেটে খাওয়া মানুষ হয় পদদলিত। বাজারে গেলে ভোগে হতাশায়। মাথায় রক্ত উঠে যায়। দিগি¦দিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আসলেই বেসামাল। প্রতিদিন-প্রতিক্ষণ বাড়ে জিনিসের দাম। এক টাকা কমলে সাত টাকা বাড়ে। এভাবে বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত সীমানায় পৌঁছেছে।
দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে ঝটিকা অভিযান চালাতে হবে। ‘সিন্ডিকেট’ নামক বিষফোঁড়াকে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। দেশের সাড়ে ষোলো কোটি মানুষ বাঁচাতে সরকারকে অবশ্যই এই উদ্যোগটি গ্রহণ করতে হবে। কারণে-অকারণে দ্রব্যের দাম বাড়ানোর চক্রটাকে হাতকড়া পরাতে পারলে অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
-
"নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল
SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।