সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫
Homeআন্তর্জাতিকদেশে শৈথল্যের কারণে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণের পরিণতি কোন দিকে

দেশে শৈথল্যের কারণে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণের পরিণতি কোন দিকে

কোন দিকে এগোচ্ছে দেশের করোনার পরিণতি ? সারা পৃথিবী যেখানে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো এখনও কঠোরতা বজায় রাখছে, সেখানে আমাদের দেশে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সেক্টর খুলে শিথিলতা  করছেন। যদিও দেশে করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতিও ঘটেনি অথচ তার মাঝেই খুলেছে বিপুলসংখ্যক গার্মেন্টস কারখানা। আটটি মন্ত্রণালয়ও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজপথেও ব্যাপকহারে যানবাহন চলাচল ও সাধারণ মানুষের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার প্রায় সব ধরনের দোকানপাটও খুলছে। নতুন করে ইফতারি পণ্য বিক্রি করার জন্য স্থায়ী বা প্রতিষ্ঠিত দোকানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

গ্রামাঞ্চলের আড্ডাগুলো গত কয়েক দিনের তুলনায় আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে। এসব শৈথল্যের করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে মহাশঙ্কায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাস পর্যন্ত করোনার ভয়ঙ্কর সময় হিসেবে আখ্যা দিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি সচেতন করা হচ্ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই কড়াকড়ি লকডাউন নিশ্চিত করছে। এ কারণে অনেক দেশে এর সুফলতাও আসতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মৃত্যুহারও সুস্থতার তুলনায় বেশি। তার মাঝেই লকডাউনের অঘোষিত শিথিলতায় ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা পরিস্থিতির এই পর্যায়ে এখনো লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব বজায়ের শিথিলতা দেখানোর সময় আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তবে দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু কারখানা বা প্রতিষ্ঠান খোলা যেতেই পাওর কিন্তু সেখানে শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখিও হতে পারে সাধারণ মানুষ।

এ প্রসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন সুস্থ হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য ও বর্তমানে চর্ম ও যৌনব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার নিউজ টাঙ্গাইলকে বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতিতে এখনই লকডাউন বা সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে শিথিলতার সময় এসেছে কি না তা স্পষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে দেশের প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় দেখতে হবে, যেগুলো হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং খাদ্যের দুর্ভিক্ষ এড়াতে সীমিত আকারে সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোর কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতো গাদাগাদি অবস্থায় এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। কেউ সেখানে আক্রান্ত হলে দ্রুত তাকে আলাদা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা না মানলে সবাইকে ভয়াবহ পরিণতি দেখতে হবে।

অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ‘করোনা ভাইরাস রোগ তৈরি করবে। আরও বিভিন্ন রোগ শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধবে। এ জন্য শরীরে প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন। খাদ্যের বিষয়টিও তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগ বা পদক্ষেপগুলো সত্যিই প্রশংসনীয়।’

নিজের করোনা মোকাবেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। বাসায় থেকেই দৃঢ় মনোবল, সঠিক পরিচর্যা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমেই করোনাকে জয় করা যায়। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে পরিবারের সদস্য কিংবা প্রতিবেশীদের অমানবিক হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, এক ঘর থেকে আরেক ঘরে করোনাভাইরাস ছড়ায় না।

জানা যায়, করোনা ঝুঁকির মধ্যেই খুলতে শুরু করেছে পোশাক কারখানাগুলো। তাই মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাজে যোগ দিতে রাজধানী ঢাকা মহানগরী, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় দলে দলে ফিরছেন শ্রমিকরা। যাতায়াতের স্বাভাবিক ব্যবস্থা না থাকায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মস্থলে ফিরতে। একসঙ্গে হেঁটে বা পণ্যবাহী যানবাহনে গাদাগাদি করেও কর্মস্থলে ফিরছেন তারা। যদিও পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্দেশনা ছিল শুধু কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকরাই কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু বাস্তবতায় উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে কিংবা চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে কোথাও না কোথাও শ্রমিকদের সমবেত অবরোধ, বিক্ষোভ বা সমাবেশ হচ্ছে। যার ফলেও দেখা দিচ্ছে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর আরও ভয়াবহ দুশ্চিন্তা।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন  বলেন, ‘করোনার এই মুহূর্তে কারখানা খোলা উচিত হয়নি। পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে বোঝা যাচ্ছে না। সুরক্ষার বিষয়টি চিন্তা করলে আপাতত এখনই কারখানা খোলাটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।’

গার্মেন্টস খাতের বাইরেও স্বল্পপরিসরে কার্যক্রম শুরু করেছে আটটি মন্ত্রণালয়। উপচে পড়া মানুষ ও যানবাহন নিয়ে নৌবন্দরে চলছে ফেরি। এর বাইরেও গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দোকানগুলো খুলে রাখার সময় দুপুর ২টা থেকে বাড়িয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইফতারি পণ্য কেনাবেচার জন্য স্থায়ী রেস্তোরাঁ বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি।

যেখানে ২৭ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত দেশে  ২৪ ঘণ্টায় ৪৯৭ জন করোনায় আক্রান্ত হন। মারা গেছেন ৭ জন। তার আগের দিন রোববার ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪১৮ জন এবং মারা গেছেন ৫ জন। এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন ১৫২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩১ জন। এ হিসেবেও দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই এগোচ্ছে। সেখানে এভাবে গার্মেন্টসহ সব ক্ষেত্রে শৈথল্যের কারণে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণের পরিণতি কোন দিকে এগোচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -