টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ২০১৫ সালে দ্বিতীয় ধাপে ৩৪ এবং ২০১৭ সালে তৃতীয় ধাপে ৩৫টি বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগের নামে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কমিটি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিজনের কাছ থেকে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে এসব নিয়োগ দেয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব অনিয়মের ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে নিয়োগ প্রত্যাশীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নিয়ম বর্হিভূত নিয়োগের বিরুদ্ধে শরাতৈল বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রত্যাশী শ্রী সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের বিরুদ্ধে টাংগাইল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
ঘাটাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আদেশ বলে ৬৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে (৬৯ ) জন দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ০৬ (ছয়) সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ কমিটি গঠন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীনকে সভাপতি এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিমা আক্তার কে সেক্রেটারী করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ঘাটাইল আসনে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার প্রতিনিধি হিসেবে তার বিশ্বস্ত সহযোগী লোকেরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান আরজু এবং ঘাটাইল উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান তারই চাচাত ভাই ঘাটাইল ইউনিয়ন আওয়ামীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর খান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকরা নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছে।
মামলার বিবরণ ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নিয়োগ কমিটির সভাপতি বিধি অনুযায়ী নিয়োগ না দিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় নেতা ও স্ব স্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহযোগীতায় কৌশল করে শিক্ষা অফিসের তদন্ত রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিয়ে কখনো প্যানেলের দি¦তীয়, আমার কখনো প্যানেলের ৩য় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ প্রদান করছেন।
জানা যায় ২০১৫ সালের দ্বিতীয় ধাপে ঘাটাইল উপজেলার ৩৪টি বিদ্যালয়ে ১জন করে দপ্তরী নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ঐ সময়ে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রত্যাশীদের লিখিত/মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে রেজাল্ট শীটে প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে পড়ে। ২বছর পর ২০১৭ সালে হাইকোর্টের নির্দেশ পেলে পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু হয়। সে অনুসারে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বের মনোনীত প্রার্থীর নাম সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত মাসিক সেবামূল্য ও চুক্তিনামা সাপেক্ষে যোগদানের অনুরোধ জানাইয়া স্ব স্ব বিদ্যালয় নিয়োগপত্র জারী করার কথা। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা না করে তার একক ক্ষমতা বলে পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের নাম করে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম বাদ দিয়ে দ্বিতীয় জনকে নিয়োগ প্রদান করে। জানা যায় ২০১৫ সালে ধলাপাড়া শরাতৈল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় সুকুমার মন্ডল প্রথম স্থান অধিকার করেন। তার জাতীয় পরিচয় পত্র ও স্কুল সার্টিফিকেট সঠিক থাকলেও অফিসের ভুলের কারণে ১৯৮৫ সালে সুকুমারের জন্ম হলেও জন্ম নিব্ধনে তার বয়স ভুলক্রমে ১৯৭৪ সাল লিপিবদ্ধ হয়। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনার বিধি অনুযায়ী তার বয়স সংশোধন করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করে। কিন্তু নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনারের সংশোধিত আদেশ ও নীতিমালা অমান্য করে সুকুমারকে নিয়োগ না দিয়ে তার স্থলে ২য় স্থান অধিকারী মাখন চন্দ্র মন্ডল কে নিয়োগ প্রদান করেন। তাছাড়াও আরো একাধিক স্কুলে নিয়োগ প্যানেলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী সুকুর মন্ডল জানান, আমি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করায় আইনগতভাবে আমাকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। নিয়োগ কমিটি আমাকে এ বিষেয় আশ্বস্ত করেছিলেন কিন্তু আমি টাকা দিতে না পারায় আমার জন্ম নিবন্ধনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে স্থানীয় নেতা গাংগাইর গ্রামের মুরাইদ সরকার ও তার চাচাতো ভাই শামীম ছাড়াও ধলাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারী আঃ বাছেদের সহযোগিতায় সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে ইউএনও স্যার মাখন চন্দ্র মন্ডলকে নিয়োগ প্রদান করেন।
ফলে নিয়োগ কমিটির এইসব অনিয়মের ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় ৬৯টি বিদ্যালয় দপ্তরী নিয়োগ চলমান থাকাবস্থায় নিয়োগ কমিটির সেক্রেটারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেলিমা আখতার ১১ জুলাই ২৮দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ীতে প্রস্থান করেন। তার স্থলে সহকারী শিক্ষা অফিসার মঞ্জুরুল হক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি প্রতিনিধিকে জানান তিনি নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানেন না। উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাজেম উদ্দিন জানান, নিয়োগের বিষয়ে কোন তথ্য তার দপ্তরে নাই। স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি নিয়োগ কমিটির সদস্য মশিউর রহমান আরজু জানান, তৃতীয় ধাপের ৩টি নিয়োগ ছাড়া তিনিই কিছুই জানেন না। উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি নিয়োগ কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর খান জানান, ফুলহারা, কোলাহা ও বীরখাগিয়ান স্কুলের ৩টি নিয়োগ ইউএনও সাহেবের ব্যক্তিগত নিয়োগ থাকায় আমরা কোনদিক না ভেবে শুধু স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান জানান আমি ইউএনও সাহেবকে ১নম্বর কে নিয়োগ দিতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি আমার কথা না নিয়ে গোপনে দুই নম্বরকে নিয়োগ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, নিয়োগের নামে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার খবর আমার কানেও এসেছে। তাই আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে সকল নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি।