নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক:
একজন বৃদ্ধ আনোয়ারা আক্তার। বয়স প্রায় এক’শ ছাড়িয়ে যাবে। তিনি এক ছেলে মুজাফোর রহমান (৩৮) ও এক মেয়ে আয়েশা বেগমের (৩৫) জননী। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ৩নং কেবিনে ৫নং বেডে ভাত খেতে বসছে কেবলমাত্র। তখনি উপস্থিত হয়েছিলেন তার কাছে “রক্ত ও আমরা” অনলাইন গ্রুপের সেচ্ছাসেবী দু’জন এডমিন ফরমান শেখ ও আশিকুর রহমান এবং সাথে বি পজেটিভ ডো৯নার সাব্বির মন্ডল। বৃদ্ধা ‘মা’য়ের পাশে হাসপাতালে আপন বলতে কেউ ছিল না। বৃদ্ধ মা ভাত খাচ্ছে আর তিন সেচ্ছাসেবীকে প্রশ্ন করছে তোমরা কে বাবা..?? উত্তরে তিনজন সেচ্ছাসেবী বললেন, আমরা আয়েশা বেগমকে খুঁজতেছি। আয়েশা কি আপনার মেয়ে। তিনি মাথা নাড়িয়ে উত্তরে বললেন: হ্যাঁ, কিন্তু কেন খুঁজতেছো। তাকে ত কিছুসময় আগে কোথায় যেন নিয়ে গেল ডাক্তাররা। আবার তারা বৃদ্ধা মা’কে প্রশ্ন করল কোথায় নিয়ে গেছে তিনি কান্না ভরা চোখে যেন আর কিছু বলতে পারছে না। তখন পাশের বেডে থাকা ভূঞাপুরের চরনিকলা গ্রামের এক হিন্দু রোগীর আত্মীয় তাদের জানালেন, আয়েশাকে অপারেশন করাতে OT নিয়ে গেছে। বৃদ্ধ রহিমা’কে তারা বুঝিয়ে বলল, আমরা আপনার মেয়েকে রক্ত দিতে ভূঞাপুর থেকে আসছি। বলুন কয় ব্যাগ রক্ত লাগবে। আমরা প্রস্তুত হয়ে আসছি আপনার মেয়েকে রক্ত দিতে। তাদের কথা শুনে তিনি কোনো কথা বলতে পারছে না। হালকা মুঠো করে ভাত খাচ্ছে। তারা বুঝতে পারছে আনোয়ারা আক্তার ভাত তার গলা দিয়ে নামছে না। চোখের দু’কোণা দিয়ে অঝড়ভাবে পানি ঝড়ছে। আর কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখের পানি মোছেন। তারপর পানি মোছে ছোট ছোট করে বলল বাবা তোমরা আমার আজ থেকে তিন সন্তান। তোমরা যা করলে তা আমার পেটের সন্তানও তা করতে পারিনি। তোমরা কি রোজা রাখছ। উত্তরে তিনজন বলল, আমরা রোজা রেখেছি। আপনি ভাত খান। আপনার মেয়ে আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ ভাল হয়ে যাবে। সরেজমিনে গিয়ে এমন বাস্তব চিত্র দেখা যায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আনোয়ারা আক্তারের পাশের কেবিনে থাকা লোকজন জানান, তার মেয়ে আয়েশা বেগমের সব দায়ভার বহন ও আপন বলতে OT বিভাগ-২ ও গাইনি বিভাগের কর্তব্যরত দু’জন নার্স। বৃদ্ধ মায়ের বড় মেয়ে আয়েশা বেগমের জয়ায়ু অপারেশন করার জন্য টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার দোহা গ্রাম থেকে আসা গত ৩দিন যাবৎ ধরে ভর্তি হয়েছে। গাইনি ও OT বিভাগের ডাক্তার রহিমা আক্তারকে জানিয়েছে ২ ব্যাগ রক্ত লাগবে। তখন আমরা ১ ব্যাগ ম্যানেজ করলে ডাক্তার বলছে ১ ব্যাগেই চলবে। OT নেয়ার ৫মিনিট পরেই এই তিনজন লোক আয়েশা বেগমকে খুঁজোখুজি করলে আমরা ঐ বৃদ্ধ মহিলার সন্ধান দেই। তখন তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলল, আমরা রক্ত দেয়ার জন্য সেচ্ছায় ভূঞাপুর থেকে আসছি। ঐ তিনজন ভাইয়েরা আরো বলছে, তারা “রক্ত ও আমরা” অনলাইন গ্রুপের এডমিন।
“রক্ত ও আমরা” অনলাইন গ্রুপের দু’জন এডমিন ফরমান শেখ ও আশিকুর এবং রক্তাদাতা ডোনার সাব্বির মন্ডলের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা জানান, ফরমান শেখ বলেন, সকালে আমার সহকর্মী ও গ্রুপের চিফ এডমিন আশিকুর রহমান আমাকে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন এক অসহায় গরীব বোনের জন্য জরুরি ১ ব্যাগ রক্ত লাগবে। পরে আশিক পুরো তথ্য দিলে বি পজেটিভ রক্ত চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তাৎক্ষণিক আমিনুল ইসলাম নামে এক লোকে কমেন্ট করে রক্ত দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তখনি আমার এক বন্ধু সাব্বিরকে ফোন করে বললাম তোমার রক্তের গ্রুপ কি তখন বলল বি পজেটিভ। তার কাছে রক্ত চাইলে তিনি অতি উৎসাহে রক্ত দিতে রাজি হলে তাকে আমি ও আশিক চলে চাই টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এডমিন আশিক জানান, আমি ফেসবুকে কোনো আইডিতে বি পজেটিভ রক্ত লাগবে এমন পোস্ট দেখে ফরমান শেখ’কে জানালে তিনি অতিদ্রুত কয়েকজন রক্তদাতা ম্যানেজ করে দেন। পরে আমরা একজন ডোনারকে টাঙ্গাইল নিয়ে যাই ডোনেটিং করার জন্য।