সোমবার, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫
Homeজাতীয়বাসাইলে বুড়ো মায়ের দু’মুঠো খাবারও জুটছে না...

বাসাইলে বুড়ো মায়ের দু’মুঠো খাবারও জুটছে না…

এনায়েত করিম বিজয় :
ময়মন বেগম। বয়সের কোঠা শত বছর পাড়ি দিয়েছেন অনেক আগেই। বিনা চিকিৎসায় স্বামী কাশেম মিয়া ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় মারা যান। ময়মন বেগমের সংসারে দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিতের গল্প আজকের নয়। দাম্পত্ব জীবনের শুরু থেকেই এ গল্প। যেন শেষ হচ্ছে না। দুই ছেলে, এক মেয়ে সন্তানের জননী ময়মন বেগম । বছর দশেক আগে ছোট ছেলেটাও ক্যান্সারে মারা যায় । বড় ছেলে নয়েজ মিয়া। মাছের ব্যবসা করেন। একই বাড়িতে থেকেও মাকে দু’মুঠো ভাত পর্যন্ত দেন না, আবার মায়ের পরনের কাপড়ের তো কোন কথাই নেই।
মেয়ে জয়ফুন বেগম। একই এলাকায় বিয়ে হয়েছে। সেও এখন বুড়ো মায়ের খবর পর্যন্ত নেন না। বয়সের ভারে বুড়ো মা’টি এখন একদিকে যেমন নুয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে স্মৃতি শক্তিও অনেকটা হাড়িয়ে ফেলেছেন।
নজের ঠিকানাটাও সঠিকভাবে বলতে পারেন না ওই বৃদ্ধা মা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল পূর্ব পাড়া তার বাড়ি। দুমুঠো ভাত দিতে হবে এই ভয়ে বৃদ্ধার খোঁজ নিচ্ছেন না তার সন্তানেরা। তার নিজের একটি ঝুঁপড়ি আছে। চেয়ে চিন্তে খাবার জুগিয়ে ওখানেই থাকতেন তিনি। বন্যার অভিশাপ নিজের ঘরটি ছাড়তে বাধ্য করেছে। ঘরের ভেতর পানি ওঠায় আশ্রহীন মানুষের সাথে আশ্রয়ের আশায় নিজেকে সাথি করেছে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যাক্ত ভবন। কয়েক দিন ধরেই অনাহারে- অর্ধহারে কিংবা পাশে থাকা অন্যের খাবার খেয়ে চলে আসছিল তিনি।
গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বাসাইলের এক আত্মীয়র বাড়ি থাকার জন্য যায়। সেখানেও জায়গা হলো না তার। আত্মীয়রা তাকে সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক পরিত্যাক্ত ভবনে রেখে যায়। রাতে বৃদ্ধা মহিলার কান্নাকাটিতে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ঘটনার বিবরণ শোনে। কয়েকজনে খাবারের জন্য কিছু টাকাও দিয়ে যায়। বুধবার (২৩ আগস্ট) থেকে তিনি বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই পরিত্যাক্ত মেঝেতেই রয়েছেন। আশেপাশের লোকজন তাকে খাবার জন্য ভাতও দিচ্ছেন।
বৃদ্ধা ময়মন বেগম সাংবাদিক দেখে অনেকটাই খুশি হয়েছেন। ভাবছেন সরকারি কোন লোকজন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তার কাছে এসেছেন। তিনি বললেন, আমার বেটা-বেটিরাই আমার খোঁজ নেয় না। আর ক্যারা খোঁজ নিব। কান্নাবিজরিত কন্ঠে তিনি বললেন, আল্লাহ যানি কেউরে বুড়ি (বৃদ্ধা) না বানায়। আমার বেটা-বেটিগো যানি আল্লাহ এতো বুড়া না বানায়। আমি নয় কোন রহমে চইল্যা গেলাম। ওগো পুলাপানের নিগ্যা যদি ওগো এরহম অবস্থা অইলে অরা তো কুলাইব্যার (সহ্য) পারবো না।
সারা জীবন কষ্ট করেছেন। এখনকার বয়সটা যে কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে কষ্ট বহন করার শক্তিটা অনেক আগেই তিনি হারিয়েছেন। এ বয়সে নির্বিগ্নে বসে খাবার কথা। ছেলে রয়েছে,মেয়ে রয়েছেন। তাদের খাবারও জুটছে। অথচ বৃদ্ধা মায়ের জন্য দু’মুঠো খাবার জুটছে না। বৃদ্ধা মায়ের পাশে সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা অথবা কোন আশ্রমের পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি হয়ে পড়েছেন।
বাসাইল পৌর মেয়র মজিবর রহমান বলেন, বৃদ্ধা মহিলাটিকে আমি চিনি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যাক্ত ভবনে রয়েছেন এটা আমার জানা ছিল না। আমি এখনি খোঁজ নিয়ে একটি ব্যবস্থা করবো।

 

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -