প্রায়সই একটা কথা শুনে থাকি রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই,রাজনীতি তার নিজস্ব ঢঙে ও গতিতে চলে। তবে রাজনীতিতে শেষ টা কি হবে বলা না গেলেও বর্তমান রাজনীতির অবস্থান ই কিন্তু শেষ কিংবা ফলাফলের গতিপথ নির্ধারন করে দিচ্ছে। কাজেই আমরা যখন নিকটবর্তী অতীত এবং সমসাময়ীক বর্তমান প্রেক্ষাপটগুলা অনুধাবন করতে পারি তাহলেই যে কোন অবস্থান তথা বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের আদ্দোপান্ত ও এ নিয়ে প্রেডিকশন করাটা সহজ হয়ে যায়।
২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর কথাটা যদিও দেশীয় কিন্ত বৈশ্বিক ভাবেও এর মর্মার্থ রয়েছে। বিগত কিছু সময়ের ব্যবধানেই বৈশ্বিকভাবে অনেক গুলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। লেবানন,ভিয়েতনাম,ইতালি,তুরস্ক সবশেষে মেক্সিকো নির্বাচন। আমাদের বাংলাদেশেও সেক্ষেত্রে পিছিয়ে নয়। মনে হচ্ছে যেন জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনের ঢল নেমেছে। ইতিমধ্যে রংপুর, খুলনা এবং গাজীপুরের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই একসাথে রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালে নির্বাচন।
এই যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হচ্ছে এবং পরবর্তীতে কিছু হবে এগুলার সার্বিক পরিস্থিতি ই কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে তার গতিপথ একেঁ দিচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ ভাবে কোন ওহি নাজিল হবে না যেটা কোন দলেকে জয়ী করতে সাহায্য করবে!! কাজেই এই অবধি বড় দুই দল বিএনপি ও আওয়ামীলীগ এর অবস্থান কোথায়? নির্বাচনের যেই ফলাফল সেটাতে আওয়ামীলীগ এর জয়জয়কার ই প্রকাশ পাচ্ছে। তাহলে বিএনপির অবস্থা কি?
যদি ঘুড়িয়ে না বলি তাহলে সেটা অনেকটা নড়বরেই!!
এই পর্যন্ত কুমিল্লার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছাড়া বিএনপির থলিতে কোন নির্বাচনী জয় নেই। ঐদিকে যদি শুধুমাত্র রংপুর কে বাদ দেই তাহলে এছাড়া বাকী সব জয়ই আওয়ামীলীগ এর দখলে। রংপুরে জাতীয় পার্টি হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান জয় লাভ করেছিল।
যদি রাজনীতির জোন হিসেবে বিশ্লেষন করি তাহলে উভয় দলেরই আলাদা করে তেমন কোন স্পেশালিটি নাই বল্লেই চলে।কারন রংপুর ও কুমিল্লা জাতীয় পার্টি ও বিএনপির শক্তিশালী জোন। কাজেই এই ক্ষেত্রেও আওয়ামীলীগ এর জয় না পেলেও ব্যর্থ বলা যাবে না।
নির্বাচনে বিএনপির এই হাল কেন? গত দুইটা নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচন আদ্দোপান্ত দেখলেই তার কিছুটা হলেও প্রমান মেলে। তবে সেটা কি একান্তই সরকারের ক্ষমতার জোড় যদি বলি তাহলে কিছুটা ভুল হবে সেক্ষেত্রে বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ( বিভিন্ন কারন এর অন্তর্ভূক্তি হতে পারে) ও সাংঘঠনিক ভাবে দুর্বল অবস্তান,বেগম খালেদা জিয়ার জেল জীবন,দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থাকা সহ আরও অন্যান্য ফ্যাক্টর কাজ করছে। খুলনা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগ ছিল এবং তার চেয়ে বেশি অভিযোগ হয়েছে সদ্দ্য শেষ হওয়া গাজীপুর নির্বাচনে।
সেখানে হাসান উদ্দিন সরকার প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছে তাদের প্রচারনার সময় বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ যেটা পোলিং এজেন্ট কে নিয়ে যেটা আসলেই চোখে পড়ার মতো। প্রায় ৪৬% ভোটকেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি ও পোলিং এজেন্ট দের নিয়ে সমস্যা হয়েছে( বিবিসি সহ আরও অন্যান্য কিছু লিগাল সোর্স বলছে)। নির্বাচন একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গনতন্ত্র বজায় রাখার পূর্ব শর্ত। কথা হচ্ছে সেই নির্বাচনটা ও কিন্তু গনতান্ত্রিক ভাবেই হওয়া উচিৎ। তা না হলে একপাক্ষিক নির্বাচন ই সম্ভব যেটা দেশে গনতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ হয়ে দাড়াবেঁ। কথা হচ্ছে সুষ্টু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাদের ভূমিকা থাকা উচিৎ? অবশ্যই সরকারী দল ও নির্বাচন কমিশনের। সেটা কি তারা আদৌ পালন করছে! আমি সরকারি দলের কথা বাদ দিলাম যদি নির্বাচন কমিশনের কথাই বলি তারা কি তাদের পুরো দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে? মোটেও না। ছোট্ট করে বলি গাজীপুরে নির্বাচনে যেখানে হাসান উদ্দিন সররকা ১৯৭০০০ এর মতো ভোট পায় সেখানে কি করে ৪৬ % ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট এর অনুপস্তিতি এবং তাদের নিয়ে রাজনীতি করতে দেখা যায় সেটা আমার বোধগম্য হয় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধি ও আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে পোলিং এজেন্টদের সকল খবরাখবর ও শেষে সকল তথ্য দেয়ার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশনের। সেখানে নির্বাচন কমিশনার তা করতে ব্যর্থ হয়েছে কাজেই কিছুটা ফাকঁফোকরতো ছিলই খুলনা ও গাজীপুর নির্বাচনে। পরোক্ষভাবে সরকারকে এই দোষ চাপানোর আগে নির্বাচন কমিশনের ওপর তা বর্তানো উচিৎ। সরকার পক্ষ তো চাইবেই বিরোধী দলকে রনক্ষেত্রে পরাজিত করতে!!এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছে আগামী নির্বাচনকে সবার অংশগ্রহনমূলক ও গনতান্ত্রিকভাবে করার জন্য ইসিকে তার ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই সাথে সুজনের সম্পাদক নির্বাচন কমিশনকে ৬-৭ টির মতো উপদেশ ও বিধিমালাও দিয়েছে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য। দুই দিন আগে নির্বাচন কমিশনের প্রধান নুরুল হুদাও বলেছে আমাদের বিশ্বাস বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে এবং সেই সাথে এই নির্বাচনে সুষ্ঠ ও পূর্নতা আসবে।
এইবার আসা যাক ৩০ এ জুলাইয়ের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে! কেমন হবে এই নির্বাচন? আমার জানা মতে গত নির্বাচনে ম্যাক্সিমাম সিটিটিতেই বিএনপির জয়ের দখলে ছিল। এবারে তিনটি সিটিতে কর্পোরেশন নির্বাচন হবে। সিলেট,রাজশাহী ও বরিশালে। রাজশাহী ও বরশালে বিএনপির একক প্রার্থীতা আছে কিন্তু সিলেটে এই প্রার্থীতার রাজনীতিটা কিছুটা ঘোলাটে যেখানে তিনটি সিটিতেই আওয়ামীলীগ এর একক প্রার্থীতা রয়েছে এবং জোটগত কোন সমস্যা নেই।অপরদিকে সিলেটের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক সহ ২০ দলীয় জোটের জামাআতের জোবায়েরের প্রার্থী এবং সাথে বিএনপির ই সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরেকজন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাড়িয়েছেঁ। এ যেন মরার ওপর খড়ার ঘা!! সুতরাং এ থেকেও বোঝা যাচ্ছে বিএনপির জোটে কিছুটা হলেও ফাটল ধরছে!! এই কনফ্লিক্ট মেটানোর জন্য কেন্দ্রিয় সরকারের পক্ষ হয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু সহ আরও কিছু নেতা গিয়েছিল কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি।। যদিও জামাআত বলে আসছে অন্যান নির্বাচন গুলাতে আমরা বিএনপির প্রার্থিতাকে সমর্থন করে আসছি এবং আমাদের সেই মনোবল আছে যে সিলেটের নির্বাচনে ভাল কিছু করতে পারবো সেই কারনেই আমাদের প্রার্থীর ঘোষনা সিলেটে। তাই সম্ভবতো আগামী জাতীয় নির্বাচনে কিছু অসঙ্গতির সাথেও জোটের এই ভঙ্গুর অবস্থা অনেক ভোগান্তিতে ফেলবে বিএনপিকে যেটার প্রভাব আগামী নির্বাচনেও পড়তে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমসাময়ীক কিছু নাটকীয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে!এ দেশের রাজনৈতিক দল গুলা এখন দিল্লী মুখি হয়ে যাচ্ছে। দিল্লির লাড্ডুর প্রেমে তারা আপাতত হাবুডুবু খাচ্ছে। কথায় আছে না দিল্লিকা লাড্ডু!! আওয়ামীলিগ এর সখ্যতা ভারতের সাথে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই, অনেকটা মামার বাড়ির মতোই। একটা রাজনৈতিক দলের কোন একটা প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক থাকতেই পারে। সেটা দোষের কিছু না!! কিছুদিন আগেও বিএনপির নেতৃবৃন্দের এক গ্রুপ গিয়েছিল দিল্লিতে রাজনৈতিক ধরনা দিতে। এই বিষয়টা অনেক চাঞ্চলকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং রাজনীতির কিছুটা মোর ঘুড়িয়ে দিয়েছে। সেই সুবাধে কয়েকদিন আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও গিয়েছিল দিল্লিতে। বেগম খালেদা জিয়া জেলে আছে বেশ অনেকদিন হয়, তারঁ ল’ইয়ার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে বিটিশ ল’ইয়ার লর্ড কার্লাইল। মজার বিষয় হচ্ছে ওনিও বাংলাদেশের বিশা না পাওয়ায় দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে সেখান থেকে ই প্রমান করবে যে রাজনৈতিক কারনেই বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করা হয়েছে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ এর জন্য নয়। কেন দিল্লি??? কাজেই বুঝা যাচ্ছে
আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত কতোটা গুরুত্বপূর্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না!! এসকল ঘটনাই তার প্রমান।
এ দিক থেকেও বিএনপির দুর্বল অবস্থান আওয়ামীলীগ থেকে।
কিছুদিন পর আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হবে। তবে এতোদাসত্তেও বিএনপি নির্বাচনের জন্য কি প্রস্তুত। সম্ভবতো না। যেখানে আওয়ামীলীগ কে দুই তিন মাস আগে থেকেই দেখছি নির্বাচনের প্রচারনা চালাতে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী প্রচারনা আরম্ভ করছে সিলেট থেকে। কেন জানি জানি না বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলা তাদের প্রচারনার উদ্ভোদন ঘটায় সিলেট থেকেই। ধর্মীয় কারন ও অনুভূতি হয়তোবা কাজ করে এই ক্ষেত্রে। পরে অনেক জায়গা হয়ে এখনও চালাচ্ছে এবং আওয়ামীলীগ এর বর্ধিত সভায় ওনি তৃনমূল পর্যায়েও কঠোর ভাবে প্রচারনা চালাচ্ছে। কাজেই আওয়ামীলীগ শক্ত আট শাটঁ বেধেই মাঠে নেমেছে। সেই তুললনায় বিএনপির প্রচারনা নাই বল্লেই চলে। প্রত্যেকটা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেখানে সরকার পক্ষ জোড়েসোরে তাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচারনা চালাচ্ছে এবং সফলতার বিভিন্ন আশার বানী শুনাচ্ছে আর সেখানে বিএনপি তাদের নেত্রীকে জেল থেকে ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত ও শুনতে হয় তাদের নানা অভিযোগের কথা। এখানেই এই বড় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য। কাজেই বিএনপির এই নড়বরে অবস্থা আগামী নির্বাচন তাদের জন্য কতোটা ফলপ্রসূ হবে তা ভাববার বিষয়!?
সুতরাং সুজনের সম্পাদকের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই জাতীয় নির্বাচনে ইসির ভূমিকার বিকল্প নেই।
গনতান্ত্রিক এই রাষ্ট্র গনতান্ত্রিকভাবে সকল রাজনৈতিক দললগুলাকে লেভেল ফিল্ড সুবিধা দিলেই আগামীতে সুন্দর ও সবার অংশগ্রহনমূলক একটা সুন্দর নির্বাচন দেখতে পারবো যেটা আমার মতো সকল সাধারন নাগরিকদেরই কাম্য।
মো: শাহ জালাল
শিক্ষার্থী,
তৃতীয় বর্ষ
ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মাভাবিপ্রবি
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।