নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: ছবি কথা বলতে চায়। কিন্তু কে শুনবে এ ছবির কথা। ছবিটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ছবির মানুষটি নুরে-আলম তালুকদার রবি। একাত্তুরের এইসব দুর্লব ছবিগুলো এখনো অযতেœ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরের খাতায় নাম লিখেয়েছেন অনেকেই। জাতি তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করছেন। কারো বীরত্বের স্মৃতি মুছে গেছে। কারো বীরত্বে স্মৃতি আজও কথা বলছে। এরকম একটি বীরের নাম নুরে আলম তালুকদার রবি। নুরে আলম টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের জর্শিহাটী গ্রামের মৃত ইউসুফ তালুকদারের ছেলে। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে নুরে আলম দ্বিতীয়। কথা হয় সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরে আলম তালুকদারের সঙ্গে। বলেন মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান পাওয়া না পাওয়ার অনেক সুখ দু:খের কথা। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাসন শুনে বাড়িতে থাকতে পারেনি তিনি। দেশ, দেশের মাটি ও মানুষকে রক্ষা করতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। কমান্ডার সাইদুর রহমান বীর প্রতিকের হাত ধরে যোগ দেন টাঙ্গাইলের ১১ নম্বও সেক্টও কাদেরিয়া বাহিনীতে। প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান ভারতের মেঘালয়ে। দেড়মাস প্রশিক্ষণ শেষে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় বহু সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে মাত্র ১৬ বছরের ওই তরুণের অবদান আজো অবিস্মরণীয়।
তিনি ১৯৭১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকলেও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করায় তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। কমান্ডার সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থেকে নৌকা নিয়ে তিনিসহ দেড় শতাধিক মুক্তি বাহিনী প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য ভারতের মেঘালয়ে রওয়ানা হন। রংপুরে পৌঁছালে আরেক দল মুক্তিবাহিনীর সাথে দেখা তাদের। মুক্তিবাহিনীর ওই দল তাদেরকে চিনতে না পেরে তাদের উপর আক্রমন করার প্রস্তুতি নেয়। এমন সময় ওই দলের কমান্ডার “ছোটদের-বড়দের, সকলের গরীবের-নিঃস্বের-ফকিওে আমার এদেশ সকলের” এ দেশাত্ববোধক এই গানটি শুনতে পান। ওই কমান্ডার বলছিল নৌকায় গান গাইলো কে ? তখন নুরে-আলম তালুকদার রবি এগিয়ে গিয়ে বললেন আমি। তখন ওই কমান্ডার বলেন- তোর কারণে আজ সবাই বেঁচে গেলো। মেঘালয়ে প্রশিক্ষণ শেষে চলে আসে দেশের মাটিতে। তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় সদস্য হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনীর ওপর। যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন এটাই তাঁর আত্মতৃপ্তি। যুদ্ধের প্রত্যক্ষ একটি ছবি তাকে আরো স্মরণীয় করে রেখেছেন। কাগমারী এলাকায় প্রত্যক্ষ যুদ্ধের সময় তার একটি ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়। ছবিটি একসময় ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবির মানুষকে খোঁজে অনেকে। কিন্তু সেই ছবি আজ অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে। স্বাধীন দেশে এখনো বেঁচে আছে নুরে আলম। দেশ পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়নি শুধু নুর-আলমের ভাগ্যের চাকা। বিয়ের পর স্ত্রী চলে যাওয়ায় ক্ষোভে আর দ্বিতীয় বিয়েও করেননি তিনি। তার কোন সন্তানও নেই। বড় ভাই মারা যাওয়ার পর ওই পরিবারের সাথে মিশে আছেন তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরে-আলম তালুকদার রবি এখন কৃষিকাজ কওে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকারি ভাতাটা পাচ্ছেন। কিন্তু তার ছবিটিকে এখনো কোন মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরে-আলম তালুকদার রবি’র ওই ছবির সূত্র ধরেই আজ তার বাড়িতে সাংবাদিকরা আসেন। নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশ পেয়েছি এটাই আত্মতৃপ্তি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ রাখার দাবি জানান তিনি নুরে-আলম তালুকদার রবি। ছবিটি জাতীয় জাদুঘরে রাখা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি মোড়াল তৈরিরও দাবি করেন তিনি।
বাসাইল উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল ইসলাম বলেন, নুর আলম একজন সত্যিকারের বীর মুক্তিযোদ্ধা। ওই ছবিটিও নুর আলমের স্বীকার করে তিনি বলেন, ছবিটি আমাদের বাসাইলসহ টাঙ্গাইল বাসীর গর্ব ও অহঙকার। এই ছবিকে সংরক্ষণ ও ছবির ওপর ভিত্তি করে একটি ভাস্কর্য তৈরির জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন , এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে যদি সত্যিই নুর আলমের ছবি হয় তাহলে এই ছবিটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।