শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪
Homeধর্মীয়ব্যক্তি গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় হজের শিক্ষা

ব্যক্তি গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় হজের শিক্ষা

 

হজ একটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতয় ফরজ ইবাদত। হজ আরবী শব্দ- এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন মহৎ কাজের জন্য দৃঢ় ইচ্ছা বা সংকল্প করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হজ হচ্ছে পবিত্র কা’বা শরীফ এবং মক্কা শরীফের সন্নিকটে মীনা, মুযদালিফা ও আরাফার ময়দানে হজের মাসে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট স্থানে কা’বা পরিদর্শনসহ কতগুলো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত আমল সুন্নাত তরীকায় এবং ধারাবাহিক ভাবে সম্পন্ন করা। নামাজ, রোজা, জাকাত যেমন ফরজ ইবাদত, তেমনি কোন সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানবান এবং যারা পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতিত হজে রওয়ানা থেকে শুরু করে হজের কাজ সম্পাদন পূর্বক বাড়ি ফেরা পর্যন্ত ব্যয় বহন করার ক্ষমতা রাখে সে সমস্ত স্বাধীন মুসলমানদের জন্য হজ একটি অন্যতম বরকতপূর্ণ অবধারিত কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘মানুষের মধ্যে যাদের বাইতুল্লাহ যিয়ারতের সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তাদের অবশ্য কর্তব্য’। ( সুরা আলে ইমরান ৯৭)
ব্যক্তি গঠনে হজের শিক্ষা:
ইসলামি ইবাদতসমূহের মধ্যে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। এক হাদিস অনুযায়ী হজকে বরং সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। তবে হজের এ গুরুত্ব বাহ্যিক আচার- অনুষ্ঠান থেকে বেশি সম্পর্কযুক্ত হজের রুহ বা হাকীকতের সাথে। হজের এ রুহ বা হাকীকত নিম্নে বর্ণিত পয়েন্টসমূহ থেকে অনুধাবন করা সম্ভব।
১. ইহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে হজের সফরে রওয়ানা হওয়া কাফন পরে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
২. হজের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়া আখেরাতের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়ার প্রয়োজনয়ীতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
৩. ইহরাম পরিধান করে পূত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাব্বাইক’ বলা সমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে ইহরামের কাপড়ের মতো স্বচ্ছ-সাদা হৃদয় নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।
৪. ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে বান্দা হজ বিষয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহর যে কোনো ডাকে সাড়া দেয়ার ব্যাপারে সদা প্রস্তুত থাকার কথা ঘোষণা দেয়। এবং বাধাবিঘœ, বিপদ-আপদ কষ্ট-যাতনা পেরিয়ে যে কোনো গন্তব্যে পৌঁছতে সে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, এ কথা ব্যক্ত করে।
৫. ইহরাম অবস্থায় সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলা স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে যে মুমিনের জীবন বল্গাহীন নয়। মুমিনের জীবন আল্লাহর রশিতে বাঁধা। আল্লাহ যেদিকে টান দেন সে সেদিকে যেতে প্রস্তুত। এমনকী যদি তিনি স্বাভাবিক পোশাক- আশাক থেকে বারণ করেন, প্রসাধনী আতর স্নো ব্যবহার, স্বামী-স্ত্রীর সাথে বিনোদন নিষেধ করে দেন, তবে সে তৎক্ষণাৎ বিরত হয়ে যায় এসব থেকে। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে বৈধ এমনকী অতি প্রয়োজনীয় জিনিসকেও ছেড়ে দিতে সে ইতস্তত বোধ করে না বিন্দুমাত্র।
৬. ইহরাম অবস্থায় ঝগড়া করা নিষেধ। এর অর্থ মুমিন ঝগড়াটে মেজাজের হয় না। মুমিন ক্ষমা ও ধৈর্যের উদাহরণ স্থাপন করে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে। মুমিন শান্তিপ্রিয়। ঝগড়া-বিবাদের ঊর্ধ্বে উঠে সে পবিত্র ও সহনশীল জীবন যাপনে অভ্যস্ত।
৭. বায়তুল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে মুমিন নিরাপত্তা অনুভব করে। কেননা বায়তুল্লাহকে নিরাপত্তার নিদর্শন হিসেবে স্থাপন করেছেন আল্লাহ তা’আলা। সফরের কষ্ট-যাতনা সহ্য করে বায়তুল্লাহর আশ্রয়ে গিয়ে মুমিন অনুভব করে এক অকল্পিত নিরাপত্তা। তদ্রুপভাবে শিরকমুক্ত ঈমানি জীবযাপনের দীর্ঘ চেষ্টা-সাধনার পর মুমিন আল্লাহর কাছে গিয়ে যে নিরাপত্তা পাবে তার প্রাথমিক উদাহরণ এটি।
৮. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ মুমিনের হৃদয়ে সুন্নতের তাজিম-সম্মান বিষয়ে চেতনা সৃষ্টি করে। কেননা নিছক পাথরকে চুম্বন করার মাহাত্ব কী তা আমাদের বুঝের আওতার বাইরে। তবুও আমরা চুম্বন করি, যেহেতু রাসূলুল্লাহ স. করেছেন। বুঝে আসুক আর নাই আসুক কেবল রাসূলুল্লাহ স. এর অনুসরণের জন্যই আমরা চুম্বন করে থাকি হাজরে আসওয়াদ। এ চুম্বন বিনা-শর্তে রাসূলুল্লাহ স. এর আনুগত্যে নিজেকে আরোপিত করার একটি আলামত। ওমর রা. হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করার পূর্বে বলেছেন, ‘আমি জানি নিশ্চয়ই তুমি একটি পাথর। ক্ষতি-উপকার কোনোটারই তোমার ক্ষমতা নেই। রাসূলুল্লাহ স. কে চুম্বন করতে না দেখলে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। হাজরে আসওয়াদের চুম্বন, তাই, যুক্তির পেছনে না ঘুরে, আল্লাহ ও রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্যের চেতনা শেখায় যা ধর্মীয় নীতি-আদর্শের আওতায় জীবনযাপনকে করে দেয় সহজ, সাবলীল।
৯. তাওয়াফ আল্লাহ-কেন্দ্রিক জীবনের নিরন্তর সাধনাকে বুঝায়। অর্থাৎ একজন মুমিনের জীবন আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এক আল্লাহকে সকল কাজের কেন্দ্র বানিয়ে যাপিত হয় মুমিনের সমগ্র জীবন। বায়তুল্লাহর চার পাশে ঘোরা আল্লাহর মহান নিদর্শনের চার পাশে ঘোরা। তাওহীদের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের চার পাশে ঘোরা। তাওহীদ নির্ভর জীবনযাপনের গভীর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা। আর সাত চক্কর চূড়ান্ত পর্যায়কে বুঝায়। অর্থাৎ মুমিন তার জীবনের একাংশ তাওহীদের চার পাশে ঘূর্ণায়মান রাখবে আর বাকি অংশ ঘোরাবে অন্য মেরুকে কেন্দ্র করে, এরূপ নয়। মুমিনের শরীর ও আত্মা, অন্তর-বহির সমগ্রটাই ঘোরে একমাত্র আল্লাহকে কেন্দ্র করে যা পবিত্র কুরআনে ‘পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।
১০. আল্লাহ তা’আলা নারীকে করেছেন সম্মানিতা। সাফা মারওয়ার মাঝে সাত চক্কর, আল্লাহর রহমত-মদদ কামনায় একজন নারীর সীমাহীন মেহনত, দৌড়ঝাঁপকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যে শ্রম-মেহনতের পর প্রবাহ পেয়েছিল রহমতের ফোয়ারা ‘যমযম’। সাত চক্করে সম্পূর্ণ করতে হয় সাঈ যা, স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহর রহমত-সাহায্য পেতে হলে সাত চক্কর অর্থাৎ প্রচুর চেষ্টা মেহনতের প্রয়োজন রয়েছে। মা হাজেরার মতো গুটি গুটি পাথর বিছানো পথে সাফা থেকে মারওয়া, মারওয়া থেকে সাফায় দৌড় ঝাঁপের প্রয়োজন আছে। পাথুরে পথে সাত চক্কর, তথা প্রচুর মেহনত ব্যতীত দুনিয়া- আখেরাতের কোনো কিছুই লাভ হবার মতো নয় এ বিধানটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় পরিষ্কারভাবে।
১১. উকুফে আরাফা কিয়ামতের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে। যেখানে বস্ত্রহীন অবস্থায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে গুণতে হবে অপেক্ষার প্রহর। সঠিক ঈমান ও আমলের অধিকারী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাবে আল্লাহর করুণায়। আর ঈমানহীন-ত্রুটিপূর্ণ ঈমান ও আমলওয়ালা ব্যক্তিদেরকে অনন্ত আযাব ভোগ করাতে শেকল পরিয়ে ধেয়ে নেয়া হবে জাহান্নামের পথে।
১২. হজ হচ্ছে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও মুসলিম উম্মার ঐক্যের এক বাস্তব নিদর্শন। যার ফলে হজের সময় পবিত্র নগরী বাইতুল্লাহ ও মদিনায় বিলিন হয়ে যায় জাতি, রং, ভাষা, দেশ ও শ্রেণীর উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ। প্রকাশ পায় ভ্রাতৃত্ব ও আনুগত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। রাজা-প্রজা সকলকেই একই রঙের পোশাক পরে একই কিবলামুখী হয়ে একই আল্লাহর ইবাদাত করে।
১৩. হজ এমন একটি স্বতন্ত্র ইবাদাত যেখান থেকে সকলে ধৈর্যের বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরকালীন জিন্দেগীর ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যার ফলে দুই টুকরো সাদা কাপড়ে আবৃত বনি আদম ইবাদাত-বন্দেগিতে অনন্য স্বাদ অনুভব করে। হজের দৃশ্য দেখে অনুভূত হয় তার প্রতিপালকের মহত্ব।
১৪. হজের মৌসুম নেকি উপার্জনের এক বিরাট সুযোগ। এ সময় সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়, পাপরাজি মাফ করে দেওয়া হয়। বান্দা প্রতিপালকের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর তাওহিদ বা একত্ববাদকে নিঃসংকোচে মেনে নেয়। তাঁর বিধি-বিধান পালনে সকল অপারগতাকে স্বীকার করে নেয়। যার ফলে হাজিগণ ঐ দিনের নিষ্পাপ শিশুর মতো মা’ছুম হয়ে ফিরে আসে, যে দিন তার মা তাকে ভূমিষ্ট করেছিল।
১৫. হজ মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করিয়ে দেয় দুনিয়াতে নবি-রাসুলগণের একত্ববাদের দাওয়াতি মিশনের কথা; তাদের ইবাদাত-বন্দেগির কথা; আরো স্মরণ হয় তাঁদের দা‘ওয়াত ও জিহাদ এবং মহান চরিত্রের কথা। হজ মানুষকে পরকালের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করে। অর্থাৎ হজের সফর মানুষকে পরকালীন জীবনের প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করে, যে সফরে থাকবে না কোনো সন্তান-সন্তুতি, স্ত্রী ও আপনজন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় হজের শিক্ষা:
আল্লাহ পাকের যে কোন হুকুমের মধ্যে হাজার হাজার হেকমত বা রহস্য লুকিয়ে থাকে, মানুষের জ্ঞান যেখান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ব্যক্তি যতই চিন্তা করবে, ততই রহস্যাবলী উদঘাটিত হতে থাকবে। হজের মধ্যে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন ধরনের হেকমত আবিষ্কার করেছেন। কয়েকটি এরকম
১. যে কোন শাসক নিজের প্রজাদের বিভিন্ন স্তরের লোকদেরকে বছরে কমপক্ষে একবার একই স্থানে সমবেত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। হজের মধ্যে সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি বিদ্যমান।
২. মুসলিম জাতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন দেশের ইসলামী চিন্তাবিদগণ যদি সমষ্টিগতভাবে কোন কর্মসূচি গ্রহণ করতে চান, তবে হজের মৌসুমই তার উৎকৃষ্ট সময়।
৩. মুসলিম দেশগুলোর মুসলমানদের মধ্যে আপস, একতা ও সম্পর্ক স্থাপনের জন্য হজের চেয়ে উৎকৃষ্ট সময় আর হয় না।
৪. ধনী-গরিব-এর ব্যবধান ঘুচিয়ে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পথে ‘ব্যর্থ পুঁজিবাদ’বিরোধী সাম্যবাদীদের যাবতীয় পরিকল্পনা এবং স্কীম সারা বিশ্বের যে কোন অঞ্চলে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামের যে কোন বিধান, বিশেষ করে হজ সে সাম্যবাদী উদ্দেশ্যকে পরম সার্থক করে দেখিয়েছে। এখানে আমীর-ফকীর, উঁচু-নিচু, মালিক-শ্রমিক, হিন্দী-আরবী, তুর্কী-চীনা ভেদাভেদহীনভাবে একই অবস্থায়, একই বেশভূষায়, একই আমলে, বেশ কিছু সময়ের জন্য একত্রে জীবনযাপন করে এবং এই সাম্যচেতনা নিয়ে ঘরে ফেরে।
৫. জাতীয় সপ্তাহ বা পক্ষ পালনের জন্য মানুষ কত ব্যবস্থা, কত শত প্রচার এবং খরচপত্র করে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য ইসলামী উদ্দেশ্যে বিনাপ্রচারে হজের মাস যিলহজ-এর প্রথম পনের দিন পক্ষপালনের একটি অনুপম ও অতুলনীয় সুযোগ।
৬. পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের হেফাজত এবং দর্শন, বিশেষ করে আম্বিয়ায়ে কেরামের স্মৃতিসমূহ স্বচক্ষে দেখার জন্য হজের সফরই হল অপূর্ব ব্যবস্থা; বলা যায় এটি ইতিহাসচর্চার এক অনন্য ব্যবস্থা।
৭. সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য হজের চেয়ে উপযুক্ত সময় আর হয় না; কারণ, যে কোন দেশের শিল্পপণ্য, আবিষ্কার ও উৎপন্ন দ্রব্যের এক অভাবনীয় সমাবেশ একমাত্র হজের মৌসুমেই হয়ে থাকে।
৮. পারস্পরিক সহযোগিতার ধাপ ছাড়াই হজ ধনী-গরিবের সহঅবস্থান ও সহযোগিতার অপূর্ব সুযোগে পরিণত হয়।
৯. হজের সমাবেশ হতে পারে সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের এক অভাবনীয় সুযোগ।
১০. হজের মহাসমাবেশ ও আন্তর্জাতিক ঐক্য ইসলামের দুশমনদের অন্তরে কশাঘাতের চাবুক হয়ে কাজ করতে পারে।
১১. বিশ্বমুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, ভালবাসা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা কায়েম করার জন্য হজই হতে পারে বৃহত্তম উপলক্ষ।
১২. অন্যদের খরচবহুল আপত্তিকর মেলা’র মোকাবেলায় হজ হচ্ছে ইসলামের পবিত্র ও অনন্য মিলনমেলা, যেখানে খেলতামাশার পরিবর্তে তাওহীদী শক্তি ও আল্লাহপ্রেমের সীমাহীন চর্চা হয়ে থাকে।
১৩. হজ হচ্ছে স্বধর্মের প্রবর্তকের (নবীজীর স.) রওজা যিয়ারত এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধির সহজ সুযোগ।
১৪. হজের সমাবেশকে ইসলামের কেন্দ্রভূমি মক্কা-মদীনার শক্তিবৃদ্ধি ও শান-শওকত প্রদর্শনের বেনজীর ব্যবস্থাই বলতে হবে। অন্য কোন ধর্মে বা মতাদর্শে এই ব্যবস্থা নেই বা থাকলেও এই মাত্রা কিংবা এর কাছাকাছি মাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
উপসংহার: মানুষের নৈতিক চরিত্র, আচার-ব্যবহার ও পারষ্পারিক মোয়ামেলাতের উৎকর্ষ সাধনে হজের ভূমিকা অনন্য। মানুষের পেছনের গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যমও হল হজ। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘এক উমরা হতে অন্য উমরা, এ দুয়ের মাঝে যা কিছু (পাপ) ঘটবে তার জন্য কাফফারা। আর মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়।” (বুখারী ও মুসলিম) ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, ‘তোমরা পর পর হজ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের সওয়াব তো জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। হে আল্লাহ! সকল হাজীদের হজকে হজে মাবরুরে পরিণত করে দিয়ে তাদের সকল গুনাহ মাফ করে দিন এবং হজের শিক্ষা নিয়ে বাকি ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় কাজে ভূমিকা রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।

 

লেখক:
সভাপতি- বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদ, টাঙ্গাইল জেলা।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -