রবিবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
Homeটাঙ্গাইল জেলামধুপুরমধুপুরে আদিবাসী বিউটিশিয়ানরা এখন দিনমজুর

মধুপুরে আদিবাসী বিউটিশিয়ানরা এখন দিনমজুর

নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চলের আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের বিউটি পার্লারে কর্মরত নারী বিউটিশিয়ানরা কর্মহীন হয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন মাঠে। প্রান্তিক পর্যায়ের এই নারীরা পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে আনারস, কলা, হলুদ ও আদার জমিতে দিনমজুরের কাজ করে পরিবারের ব্যয়ভার জোগাড়ে নেমেছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই তাদের কাজ করে সংসার চালাতে হবে বলে বিউটিশিয়ানরা জানান।

মধুপুর অঞ্চলের আদিবাসী পল্লিতে গিয়ে জানা যায়, গারো নারীরা রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিউটি পার্লারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ী, ফুলবাগচালা, অরণখোলা, কুড়াগাছা, বেরীবাইদ, আউশনারা ও মহিষমারাসহ সাতটি ইউনিয়নে তাদের বসবাস। এসব ইউনিয়নে বসবাসরত গারো নারীরা বিউটি পার্লারে কর্ম ও জীবন জীবিকার সন্ধানে বিউটিশিয়ান হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করে পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন। সংসারের ব্যয়ভার চলছে অনেকটা তাদের কর্মের ওপরেই। এক জরিপে দেখা যায়, মধুপুরে ৪৪টি গ্রামে ১৭ হাজার ৩২৭ জন গারো সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে এক হাজার ১৩১ নারী দেশের বিভিন্ন জেলায় বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। যা তাদের মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

সাইনামারি গ্রামে কথা হয় নিপা সাংমার সঙ্গে। তিনি জামালপুরে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। শুধু তিনি নন তার আরওও চার বোন বিভিন্ন এলাকায় একই কাজ করেন। করোনার প্রভাবে ছেলেমেয়ে স্বামীসহ সব বোন এখন বাবার বাড়িতে এসে পড়েছেন। তাদের তিন মাস ধরে কাজ ও বেতন বন্ধ। অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলছে।। মাগন্তীনগর গ্রামের লক্ষ্মী রানী বর্মন জানান, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে ২০১২ সালে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিন মাস যাবত কাজ বন্ধ থাকায় একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে তার সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ভুটিয়া গ্রামের ক্লান্তি হাজং, আমলীতলা গ্রামের দিতি মাজি ও শর্মিলি চিরান জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর পরই বিউটি পার্লারের মালিকরা পার্লার বন্ধ করে দেওয়ায় তারা বাড়িতে চলে আসেন।

শুধু নিপা, লক্ষ্মী, ক্লান্তি, লিপি, লিন্ডা, পাপড়ি, দিতি, রবিতারাই নন, তাদের মতো প্রায় এক হাজার ১৩১ বিউটিশিয়ান রয়েছেন এ এলাকায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দিন মজুরি করছেন কেউবা কাজ না পেয়ে বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পার্লার বন্ধ থাকলে তাদের অর্থনৈতিক সংকট আরও বাড়বে। এতে সাময়িক বেকার হয়ে পড়বে গড় এলাকার বিউটিশিয়ানরা। করোনাকালীন প্রণোদনার দাবি তাদের।

আদিবাসী নারী প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং জানান, আমরা সংসারে কাজ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু বিউটিশিয়ানরা এসি রুমে কাজ করতে অভ্যস্ত। করোনা পরিস্থিতির কারণে রোদে পুড়ে দিনমজুরের কাজ করে সংসারের ব্যয় নির্বাহে তাদের কষ্ট হচ্ছে। তিনি তাদের জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানান।

আবিমা কালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সভাপতি অজয় এমৃ জানান, বিউটি পার্লারের মেয়েদের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে তাদের পরিবারের সংসার চলে। বর্তমান করোনাকালে তাদের কোনো আয়-উপার্জন নেই। কেউ কেউ দিনমজুরের কাজ করতেও লজ্জাবোধ করেন। তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি। জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, নতুন বিউটিশিয়ান যাদের স্বল্প বেতন এবং যারা পার্লারের মালিক তাদের সমস্যা বেশি। নতুনরা যা বেতন পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। অন্যদিকে মালিকদের পার্লার বন্ধ থাকায় ঘর ভাড়া বাসা ভাড়া অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

মধুপুর উপজেলা নিবআহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা জানান, মধুপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গারো নারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিউটিশিয়ানের কাজ করেন। বর্তমানে কর্মহীনতার কারণে তাদের নেতাদের কাছে বিউটিশিয়ানদের তালিকা চেয়েছি। তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -