নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক:
মনে মনে বিয়ে হয়ে গেছে, আমি তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। কথাগুলো বলছিলেন করটিয়া আবেদা খানম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পলি আক্তার। তার পিতার নাম আব্দুর রহমান। বাড়ি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা গ্রামে।
জানা গেছে, ছাত্রী পলি আক্তারের সঙ্গে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কাশেম মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়ার (২২) বিয়ের দিন ধার্য ছিল বুধবার। আব্দুর রহমান তার বোন জামাই মির্জাপুরের গোড়ই ইউনিয়নের নাজিরপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে এ বিয়ের আয়োজন করেন।
গোপন সংবাদে মির্জাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাদা মাড়িয়ে দুপুর তিনটার দিকে আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে হাজির হন। সেখানে গিয়ে মেয়ের বাবার সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং মেয়েকে আনতে বলেন। কিছুক্ষণ পর মেয়ে হলুদ শাড়ি পড়ে নির্বাহী কর্মকর্তার সামনে আসেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন কন্যার কাছে নাম জানতে চাইলে বলেন পলি আক্তার। কোন ক্লাসে পড় জানতে চাইলে বলেন করটিয়া আবেদা খানম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তোমার বয়স কত তার উত্তরে পলি বলে আমি ম্যাচিউরড। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাচিউরড সম্পর্কে মেয়েকে কাউন্সিলিং করেন। পরে মেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন স্থানীয় ইউপি মেম্বার আদিলুর রহমান খানকে মুঠোফোনে বিয়ে বাড়িতে ডেকে আনেন। এর কয়েক মিনিট আগে মেয়ে হলুদ কাপড় ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পরার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরে মেয়ের মা ও ফুফু আনোয়ারের স্ত্রী জরিনা বেগম মেয়েকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন।
এরপর নির্বাহী কর্মকর্তা ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে মেয়ের বাবা আব্দুর রহমানকে উপজেলা কার্যালয়ে ডেকে আনেন এবং বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে কাউন্সিলিং করেন। এসময় ইউপি মেম্বার আদিলুর রহমানের উপস্থিতিতে আব্দুর রহমান মেয়ের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না মর্মে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মুচলেকা দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাল্য বিয়ের খবর জানা মাত্রই সব কাজ ফেলে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে বর ও কনে পক্ষের উপস্থিতিতে এর কুফল নিয়ে কাউন্সিলিং করি। বাল্য বিয়ে বন্ধে সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সচেতন হতে হবে।