টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিরল প্রজাতির একটি কক্কর (তক্ষক, টক্কা, গেকো গেকো) সাপ উদ্ধার করে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন পাচারকারীকেও আটক করে। আটকের পরের দিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৯জুন) রাতে মির্জাপুরের দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই দোলোয়ার হোসেন গোড়াই-সখিপুর সড়কের হাটুভাঙ্গা এলাকায় প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে একটি কক্কর সাপসহ তিনজনকে আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- পার্শ্ববর্তী সখিপুর উপজেলার কুতুবপুর নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন, সখিপুর পূর্বদক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর ছেলে মো. সিরাজুল ইসলাম (৩৮) ও প্রাইভেটকার চালক সখিপুরের মওচালা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মো. মোশারফ হোসেন (২৮)।
থানা পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিকদের সাপটির ছবি দেই দিচ্ছি বলে দশ দিন পার করলেও ছবি না দিয়ে বলছেন ওটি কক্কর সাপ নয়, গুই সাপের বাচ্চা ছিল।
জানা গেছে, সোমবার (১৯মে) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এএসআই দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন কনস্টেবল আজগানা ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালায়। এসময় সখিপুর থেকে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেটকারে তল্লাশি চালিয়ে একটি ব্যাগ থেকে কক্কর সাপ উদ্ধার এবং চালকসহ তিনজনকে আটক করেন। এই সাপটি কক্কর, তক্ষক বা টক্কা অথবা গেকো গেকো নামে পরিচিত। এদিকে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। থানার রেজিস্টার খাতায় আটককৃতদের নাম লেখা হলেও পরে তাদের নাম কেটে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মির্জাপুরের পোষ্টকামুরী ও বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের কয়েকজন বলেন, কক্কর সাপটি কিনতে তারা পুলিশের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে দশ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন। তবে থানা পুলিশ সাপটি তাদের কাছে বিক্রি করেননি।
কক্কর সাপ কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রাণীটা পুরো গলিয়ে ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ তৈরি করা হয়। এই প্রাণী কাউকে কামড় দেয়ার পর তার ঘা শুকিয়ে গেলে ওই ব্যক্তির শরীরে কোন ধরনের রোগ জীবাণু থাকবে না বলে মন্তব্য করেন।
মির্জাপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাকিব উল আজমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তক্ষক প্রাণীটি আমাদের দেশে বিরল। এই প্রাণী বাইরের রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন মূল্যমান কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
মির্জাপুর থানায় একটি তক্ষক উদ্ধার এবং তিন পাচারকারী আটক করার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা পুলিশ আমাদের কিছুই অবগত করেননি। তবে তাদের ছেড়ে দেয়া উচিৎ হয়নি। মামলা দিয়ে সাপটি চিরিয়াখানায় পাঠানো উচিৎ ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. সাহাদত হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তক্ষক বিরল, অনেক মূল্যবান সরীসৃপ একটি প্রাণী। এটি বড় বড় গাছের ডালে বসবাস করে। এটি টক টক করে ডাকে। বিষাক্ত ভয়ঙ্কর একটি সাপ। এর বিষ ও চামড়া ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দেওহাটা ফাঁড়ির এএসআই মো. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কক্কর সাপসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। সাপটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। আটককৃতদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনটি কেটে দেন।
মির্জাপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটি কক্কর সাপ কিনা আমার জানা নেই। তবে দেখতে গুই সাপের মত। সাপটি আমাদের কাছে হেফাজতে ছিল। আমার এক কনস্টেবল গুই সাপের বাচ্চা মনে করে ছেড়ে দিয়েছে। এর গায়ের রং হলুদ-সবুজ। আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।