নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: পারিশ্রমিক চাওয়ায় এক কিশোরের চোখের মধ্যে স্ক্রুড্রাইভার ঢুকিয়ে চোখ নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে তার চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। গত ১২ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরতে মিলন হোসেন (১৫) তার চাচাতো ভাই মামুনের সঙ্গে ডিস লাইনের কাজ শুরু করে। কাজ করলেও মিলনকে দেওয়া হতো না কোনো পারিশ্রমিক। গত ১২ এপ্রিল পারিশ্রমিকের টাকা চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মিলনের চোখে স্ক্রুড্রাইভার ঢুকিয়ে দেন মামুন। এতে অজ্ঞান হয়ে যায় মিলন। কিন্তু তার পরিবারকে জানানো হয়, সে কাজ করতে গিয়ে তিন তলার ছাদ থেকে পরে গেছে।
নজিরবিহীন এ বর্বরতায় গুরুতর আহত মিলন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) ৩০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মামুনসহ তিনজনকে আসামি করে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেছে পরিবার।
এ বিষয়ে মিলন হোসেন জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এলাকার নিউটেক্স গেটের পাশে আনিস মুন্সির তিনতলা বাড়ির ছাদে মামুন তাকে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে মিলনের কাছে কাজের টাকা চাওয়ার কৈফিয়ৎ চান মামুন এবং তিনি কোনো টাকা দেবেন না বলেও জানিয়ে দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মামুন তার ডান চোখে স্ক্রুড্রাইভার ঢুকিয়ে ঘোরাতে থাকেন। এতে মিলন অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
মিলনের বাবা গিয়াস উদ্দিন জানান, ঘটনার পর মিলনকে কুমুদিনী হাসাতালে নিয়ে তাদের খবর দেন মামুন। তাদের জানানো হয়, মিলন ছাদ থেকে পড়ে গেছে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মিলনকে ওই রাতেই ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মিলনের বোন নাসরিন বলেন, ‘হাসপাতালে টিকিট কাটা থেকে শুরু করে ভর্তির সব কার্যক্রম করে মামুন। হাসপাতলের মিলনের নাম পরিবর্তন করে বিল্লাল হোসেন নামে কাউন্টার থেকে টিকিটি কাটে সে। বিল্লাল নামেই মিলনকে ভর্তি করে সে। এমনকি হাসাতালেরে রেজিস্টার্ড খাতায় মিলন সড়ক দুর্ঘটানায় আহত হয়েছে বলে তথ্য লেখায় সে।’
প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই মামুন ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নাসরিন।
ঢামেক হাসাপতালের চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফরিদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে মিলনের। ডা. ফরিদুল বলেন, ‘রোগীর ডান চোখ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। দৃষ্টিশক্তি আর কখনোই ফিরে পাবে না। বাঁ চোখের অবস্থাও ভালো নয়। এটির দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার সম্ভাবনাও খুব কম।’
এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক জানান, ঘটনার পর মিলনের পরিবার থেকে থানায় কোনো অভিযোগ করতে আসেনি। গত মঙ্গলবার তিনি ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তবে আদালত থেকে থানায় মামলার কোনো নথি এখনো আসেনি।