হিজরি সনের অষ্টম মাস শাবান। ইসলামে এ মাসটি কয়েকটি কারণে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক। মহানবী (স.) রজব মাস থেকেই বছরের সেরা মাস রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রেখে রমজানের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতেন। এ মাসের মধ্যভাগেই রয়েছে ফজিলতের রাত ‘লাইলাতুল বরাত’।
শাবান মাসের নফল রোজা: রাসুল (স.) শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন না।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন, তোমাদের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু (নফল) আমল করো। কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা নেকি দেওয়া বন্ধ করেন না। (বুখারি: ১৯৭০)
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৩৬)
রমজানের প্রস্তুতিতে যে দোয়া করতে হয় : রাসুল (স.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী বেশি বেশি রমজানের বরকত লাভের জন্য দোয়া করতেন। রমজান মাসে ইবাদত করার সুযোগ ভিক্ষা চাইতেন। রজবের মতো এই মাসে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন—আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান। অর্থ: হে আল্লাহ, রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। (আহমাদ: ২৫৯)
শাবানের শেষ দু্ই দিনের রোজা : শাবান মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা না রাখাই উত্তম। তবে নিয়মিত রুটিন হিসেবে ওই দুই দিন পড়ে গেলে রাখা যাবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, তোমরা রমজানের এক দিন অথবা দুই দিন আগে রোজা রাখবে না। অবশ্য কেউ প্রতি মাসে ওই দিনে রোজা পালনে অভ্যস্ত হলে রাখতে পারবে। (আবু দাউদ: ১৩৩৫)
লাইলাতুল বরাতের ফজিলত : শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ইসলামের পরিভাষায় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা লাইলাতুল বরাত বা ‘সৌভাগ্যের রাত’ বলা হয়। এই রাতে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়। অভাবীকে রিজিক দেওয়া হয়। বিপদগ্রস্তকে বিপদ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই রাত জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত।
হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসবে, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড়ো, দিনে রোজা রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, আমার কাছে কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফজর পর্যন্ত। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)