শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব ভারতীর সমাবর্তনে বাংলায় ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বাংলাতে সবাইকে ‘শুভসকাল’ ও ‘প্রণাম’ জানিয়ে শুরু করেন ভাষণ। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এসে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি’। শান্তিনিকতেনর আম্রকুঞ্জে সমাবর্তনের মঞ্চে বক্তব্য দেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যা যা অসুবিধা হয়েছে, তার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি।
মোদি জানান, মঞ্চে ওঠার সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কথা তার মনে হচ্ছিলো। তিনি বলেন, ‘যখন মঞ্চের দিকে আসছিলাম, আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা স্মরণ করছিলাম। তিনি এখানে মহাত্মা গান্ধী এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবসময় বিশ্ব নাগরিক হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।শুক্রবার সকালে মোদি সেখানে পৌঁছানোর পর তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সফরসঙ্গীদের নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এ সফরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশপাশি আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডিলিট) গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে শান্তিনিকেতনে নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন। মোদি পৌঁছানোর পর সৌজন্য বিনিময় হয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। উত্তরীয় পরিয়ে তাদের স্বাগত জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমন সুযোগ মনে হয় এর আগে কখনো সৃষ্টি হয়নি যেই সমাবর্তনে এক সাথে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি দেখা গেছে’। তার এমন বক্তব্য শুনে উপস্তিত শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পরে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন ‘ভারত ও বাংলাদেশ ভিন্ন রাষ্ট্র হলেও পারস্পরিক সহযোজন ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে একসাথে জোড়া লাগানো’।সংস্কৃতি কিংবা জননীতি সম্পর্কে দুই দেশ একে ওপর থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,‘দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধনের অনেক দৃষ্টান্ত আছে এবং এই শান্তিনিকেতন এমনই এক দৃষ্টান্ত যেটা ব্রিটিশ কিংবা দুই দেশের বিভাজন দ্বারা ভাগ করা যাবেনা’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সম্পর্কে প্রশংসা করতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতেও সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল একজন ব্যক্তিত্ব। বঙ্গবন্ধু ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুরাগী।‘
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যুদ্ধ ভারতের ওপারে হলেও, রক্তগাঁথা এ যুদ্ধ ভারত সমানভাবে অনুভব করেছে।‘ নরেন্দ্র মোদী মহাকাশে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিবাদন জানান। মহাকাশ প্রযুক্তিতে ভবিষ্যতে দুই দেশের পারস্পরিক সহায়তা বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল সোলার এলায়েন্স সামিটে অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি আরো বলেন,‘বাংলাদেশ ও ভারত প্রায় একই রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হলেও দুই দেশের চ্যালেঞ্জ একই যেমন, প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের সেবা পৌঁছানো, দেশের জনগণের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।‘ বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের সোনালী সম্পর্কের যুগ চলছে বলে জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।