করোনাকালে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে দেশের পুরো শিক্ষাসূচি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই শিক্ষাসূচি এখনও এলোমেলোই রয়ে গেছে। অন্যদিকে ঝরে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এই ঝরে পড়াদের মধ্যে অধিকাংশই মেয়ে শিক্ষার্থী। করোনার অভিঘাত লেখাপড়ায় ছেদ পড়ার অন্যতম কারণ। জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন শিক্ষায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়াদের ব্যাপারে বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা করেছে সরকারি ও বেসরকারি নানা সংস্থা। কিন্তু ঝরে পড়াদের ফিরিয়ে আনতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যে দেশের অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। আর শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী। অন্যদের অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক স্কুলের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখা। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরাতে ২০২১ সালে গঠিত হয়েছিল ‘নিরাপদে ইশকুলে ফিরি’ নামের জোট। জোটটি ২০২১ ও ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে জরিপটি করে।
জরিপটিতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই এই ঝরে পড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিগত দুটি বছরেই ছেলে শিক্ষার্থীর চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বেশি। তবে ইএবির জরিপ বলছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে শিক্ষার্থী বেশি ঝরে পড়েছে। পরিবারের আর্থিক টানাপড়েনের কারণে ছেলেদের কাজে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বেশি। তার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া, বাল্যবিয়ে, পরিবার অন্য জায়গায় চলে যাওয়া, পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি।
২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল ১ লাখ ১৮ হাজারের কাছাকাছি। ২০২২ সালের শুমারিতে এই সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে।
২০২৭ সাল নাগাদ নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছে। পরিবর্তিত বিশ্বে র জ্ঞান, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও বিভিন্ন দেশের সফল শিক্ষাব্যবস্থাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ কাজ যদি নীতিনির্ধারকরা সফলভাবে করতে পারেন, দেশের উন্নয়নে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তবে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেমন একটা কার্যকর হয়নি। গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে’ বলা হয়, দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসই হয়নি। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে সরকারি বিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো আরও পিছিয়ে।
আমরা মনে করি, করোনা মহামারির প্রভাবে শিক্ষার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি নিরূপণ করে সে অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বড় ধরনের মানসিক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সঠিক পাঠ পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যথায় এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে দীর্ঘমেয়াদে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন
-
"নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল
SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।