এম সাইফুল ইসলাম শাফলু:
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক থাকে তালাবদ্ধ। ফলে উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তৃণমূলের মানুষেরা। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) সপ্তাহে শুক্রবার বাদে ৬ দিন সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকেল আড়াই টা পর্যন্ত উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাঁরা তা থাকছেন না। যথারিতী ক্লিনিক খোলা না থাকায় অধিকাংশ স্থানেই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নিরাশ হয়ে ফিরে যান। হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক দেখা শোনার জন্য ১৭ সদস্যের কমিটি থাকলেও স্বজনপ্রীতি আর ‘ম্যানেজ’ প্রক্রিয়ায় ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের এই বিশাল প্রকল্প।
সরেজমিনে সখীপুর উপজেলার ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক (সিসি) ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগই ক্লিনিক দিনব্যাপীই তালাবদ্ধ থাকে। হাতে গোনা একটি-দুইটি ক্লিনিক কয়েক মিনিটের জন্য খোলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা শুধু হাজিরা খাতায় সাক্ষর দিয়ে আবার তালাবদ্ধ করে চলে যান হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল আড়াইটা পর্যন্ত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও অফিস সহকারীসহ তিন থেকে চারজন কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের এই নিয়ম থাকলেও নিয়মিত উপস্থিত পাওয়া যাচ্ছেনা কাউকেও।
সরেজমিনে রোববার উপজেলার ঢনঢনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের গিয়ের দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ। চিকিৎসক না পেয়ে রোগী নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত (সিএইচসিপি) শামীমা আক্তারকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। একই দিন বেলা ১টায় খুংগারচালা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ থাকায় ক্লিনিকের সামনে ২৫ থেকে ৩০ জন নারী ও শিশু চিকিৎসকের অপেক্ষায় বসে আছে।
অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য ইব্রাহিম আল মামুন নামের কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএইচসিপিকে (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
ঢনঢনিয়ার জমিদাতা আবদুল হামিদ ও খুংগারচালা কমিউনিটি ক্লিনিকের জমিদাতা জয়নাল আবেদীন বলেন, গ্রামের সাধারণ রোগীরা দূর-দূরান্ত থেকে অতি কষ্টে হেঁটে ক্লিনিকগুলোতে এসে বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ পায়। মাসে দুই একবার যখন ক্লিনিকগুলো অল্প সময়ের জন্য খোলা হয় তখন রোগী ও তাদের স্বজনদের তোপের মুখে পড়েন দাযিত্বপ্রাপ্তরা।
বড়বাইদপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী, জিতেশ্বরী গ্রামের মফিজ উদ্দিন জানান, কোনো কোনো মাসে আমরা একবারের জন্যও ক্লিনিক খোলা দেখিনা। স্বাস্থ্যকর্মীরা অনিয়মিত এলেও হাজিরা দিয়ে আবার চলে যান। বদ্ধ থাকায় বিভিন্ন ক্লিনিকের চারপাশে ঝোপঝাড় ও আবর্জনায় ভরে গেছে। এ সময় খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ক্লিনিকের ভেতরের ময়লাও কম দেখা যায়নি।
এছাড়াও অনুসন্ধানের এক মাসে সরেজমিনে উপজেলার বদ্ধ থাকা বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রোগীদের। এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাসে দুই থেকে তিনদিন ডাক্তার থাকেন। আর জ্বর বা কাশির বড়ি ছাড়া কোনো বড়ি দেয় না। এভাবেই চলছে মাসের পর মাস।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাফিউল করিম খান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই তিনিও ক্লিনিকগুলো তালাবদ্ধ থাকার অভিযোগ শুনছেন। এ বিষয়ে তিনি উবর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছেন বলে তিনি জানান।
সখীপুর উপজেলার ক্লিনিকগুলোর অবস্থা নাজুক স্বীকার করে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান জানান, সখীপুর ছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিমাসে অসংখ্য রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে । সখীপুরে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের উপস্থিতি স্বাভাবিক করতে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।