এম সাইফুল ইসলাম শাফলু: সখীপুরে আগের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার চলার পথে তেমন কোনো বাধা ছিলনা। দু-একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তেমন বড় কোন ঝড়ের মুখে না পড়ে স্বাচ্ছন্দে পাল তুলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা নিয়ে জয়ী হয়েছেন। ১৬ এপ্রিল উপজেলার দুটি ইউনিয়ন দাড়িয়াপুর ও গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওই দুই ইউনিয়নেই এবার আওয়ামী লীগের হেভিয়েট প্রার্থী। নেই কোনো বিদ্রোহী। তবে আঞ্চলিকতা ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সরব প্রচারণায় ওই দুই ইউনিয়নেই নৌকার বিজয়ের একমাত্র বড় বাধা হয়েছে গামছা।
সরেজমিন ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী আসিফ। গত নির্বাচনে আঞ্চলিকতার প্রভাবে বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম শাইফুল ইসলাম শামীমের কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন তিনি। এরপরও হাল ছাড়েননি দিন রাত ইউনিয়নবাসীর পাশেই ছিলেন তিনি। শিক্ষা-দিক্ষা ন¤্র ভদ্র ও সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার প্রবণতায় তিনি অদ্বিতীয়। মনোনিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এ ইউনিয়নে কৃষক শ্রমিক জনতালীগের হাতিয়ার গামছা পেয়েছেন দলটির উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেন মাস্টার । একজন সহজ সরল স্কুল শিক্ষক ও সাদা মনের মানুষ হিসেব যতেষ্ট পরিচিতি আছে তাঁর। সংস্কৃতমনা মানুষটি ইউনিয়নের বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে প্রায় সময়ই ব্যায় করে থাকেন। অঞ্চলিকতার টানে তাকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছে দাড়িয়াপুর,আকন্দপাড়া, কাঙ্গালীছেওসহ প্রশ্চিমের গ্রামবাসী। সঙ্গে প্রচারনায় যোগ দিয়েছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম। বঙ্গবীরের প্রতিটি পথসভায়ও ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ করা গেছে। এ প্রচারণা অব্যাহত থাকলে বিজয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন গামছা মার্কার কর্মী সমর্থকরা। বরাবরের মতো আঞ্চলিকতার টানে এবারো কি বড় ফ্যাক্টর হতে পারবে ? গামছাই নৌকার এমমাত্র বাধা হচ্ছে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আঞ্চলিকতার প্রভাব বেশী পড়বেনা। তবে নৌকা বা গামছা কোনো দলের জন্যেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া অতটা সহজ হবেনা।
বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কবির হাসান মাঠে থাকলেও নতুন মুখ হওয়ায় এ নির্বাচনে তার অবস্থান তৃতীয়। অপর দিকে ইউনিয়নের মধ্যাঞ্চল কৈয়ামধু, ছোটমৌশা, সিলিমপুর ও পূর্বাঞ্চল প্রতিমা বংকী গ্রামের ভোটার ও আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন ।
গজারিয়া ইউনিয়নে আওয়মী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হয়েছেন জেলা শ্রমিক লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। ইতালী থেকে দেশে ফিরেই নিজেকে মানবসেবায় মনোনিবেশ করেন। যে কারণেই ওই ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন হেভিয়েট প্রার্থীকে টপকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেড়ে এনেছেন। তাকে জয়ী করতে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতারাও যোগ দিয়েছেন এ প্রচারণায়। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা নূরুজ্জামান তালুকদার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ছেড়ে দিয়েছেন। নৌকার কর্মী সমর্থকরা মনে করছেন, নৌকাতেই উঠছে জাতীয় পার্টির সকল ভোট। বিজয় নিশ্চিত বলেই মনে করছেন তারা।
অন্যেিদক গজারিয়া ইউনিয়নে কৃষক শ্রমিক জনতালীগের গামছার হয়ে লড়ছেন ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বাদল মিয়া। তিনি এর আগের নির্বাচনেও গামছা মার্কায় চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছিলেন। জন সংযোগ ও সমাজসেবায় বাদল মিয়াও জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে নেই। এখানেও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ দলের শীর্ষ নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছেন গামছা মার্কায় প্রচার প্রচারণায়। কর্মী সমর্থকরা মনে করছেন, পূর্ব থেকে এ ইউনিয়নে কাদের সিদ্দিকীর একটা জুয়ার রয়েছে। এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান তালুকদার নির্বাচন ছেড়ে দেওয়ায় তাঁর ভোটগুলো গামছা মার্কায় পড়বে বলে ধারনা করছেন তারা। এ কারণে গামছার কর্মী সমর্থকরাও তাদের প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয় বলে মনে করে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। ওই দুই প্রার্থী ছাড়াও এ ইউনিয়নে বিএনপি থেকে ধানের শীষ মার্কায় ইউনিয়ন কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা এবং সতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল ইসলাম আনারস মার্কা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। তারাও তাদের কর্মী সমর্থক নিয়ে দিন-রাত প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আঞ্চলিকতার প্রভাব বেশী পড়বেনা। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে খুব কম ভোটের ব্যবধানে নৌকা অথবা গামছা মার্কার প্রার্থীরা জয়ী হবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের অধিকাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
নির্বাচনী আচরণ বিধি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় কয়েকজন প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের বিষয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করলে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন, পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম পিপিএম ও সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী সরকার রাখী প্রার্থীদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘আমাদের কাছে কোন প্রার্থীই আইনের উর্ধ্বে নয়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে অথবা ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।’
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।