নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক :
টাঙ্গাইলের সখীপুর ও বাসাইল উপজেলাকে বিভক্তকারী বংশাই নদীর উপর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার লক্ষাধিক জনসাধারণ। বংশাই নদীর পূর্বপারে সখীপুর ও পশ্চিমে বাসাইল উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন একটাই টাঙ্গাইল-০৮। শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনীতি, ব্যবসা ও হাট বাজার সবই হয় একসঙ্গে। তবুও একটি মাত্র সেতুর অভাবে সারাটা জীবন তারা দুই পারের বাসিন্দা।
বাসাইল উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সুন্যা বাজার ঘেষে বংশাই নদীর উপর সখীপুর-বাসাইল সংযোগ সেতু নির্মাণ হলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন ওই অঞ্চলের ভূক্তভোগী জনসাধারণ।
সরেজমিনে ওই এলাকার জনসাধারণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সুন্যা বাজার ঘেষে বংশাই নদীর উপর স্থানীয় পাটনী (নদী পারাপারের মাঝি) হঁরিপদ দাস ও তাঁর ছেলে রতন তরনী দাস বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে লোক পারাপার করছেন। বর্ষায় পানি বেড়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে নৌকা করে মানুষ পারাপার হয়। বর্তমানে ওই সাঁকোটিরও নড়বড়ে অবস্থা। সুন্যা বাজারে একটি প্রাইমারী স্কুল, একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি আলিম মাদরাসা ও বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। প্রতিদিন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সখীপুর-বাসাইলের হাজার হাজার জনসাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ ওই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করছেন। এছাড়া হঠাৎ কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রোগী বহনের কোনো যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা নেই ওই সাঁকোতে। এসব অসুবিধার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বংশাই নদীর উপর সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী।
সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও, দাড়িয়াপুর, যাদবপুর, বেড়বাড়ী, কৈয়ামধূ, প্রতিমা বংকী, শোলাপ্রতিমা, বোয়ালী, নলুয়া, হিজলীপাড়া, দেওবাড়ি, লাঙ্গুলিয়া, চাকলাপাড়া, সিলিমপুর, কালিয়ান গ্রামবাসীসহ উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়াও বাসাইল উপজেলার সুন্যা, গিলাবাড়ী, কলিয়া, কাউলজানি, মান্দারজানিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ ওই সড়ক দিয়ে পার্শ্ববতী সখীপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন।
স্থানীয় চাইন্ড স্টার এডুকেশন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদা আক্তার ওই সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় এ প্রতিবেদককে জানায়, ‘বাঁশের ভাঙা পুল দিয়ে হাটতে খুব ভয় করে। পানি বেশী হলে ভয়ে আর স্কুলে আসিনা।’
সুন্যা সম্মিলিত আলিম মাদরাসার সহ:সুপার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিদিন এপারে মোটরসাইকেল রেখে ওপারে যাই। এ বিড়ম্বনা শেষ হবে কবে জানিনা।’
সুন্যা বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি সেতু নির্মাণ হোক।’
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ কুদ্দুছ বলেন, ‘সাঁকোর পূর্বপাশে সখীপুর অংশের এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের জন্যে একটি প্রকল্প উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত কাজটি বাস্তবায়ন হবে। তবে ওই সেতুটি বাসাইল উপজেলার আওতাভুক্ত।’
জানতে চাইলে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার মিয়া বলেন, ওই সাঁকোটির পশ্চিম পার্শ্বে সুন্যা বাজার থেকে বাসাইল উপজেলা শহর পর্যন্ত সড়কটি ইতোমধ্যেই পাকা হয়েছে। ওই সেতুটি নির্মাণের জন্যে একটি প্রকল্প উর্ধ্বতন অফিসে পাঠানো হলেও আর কোনো নির্দেশনা পাইনি।’ তবে অচিরেই এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশস্ত করেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয় বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ‘বংশাই নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আমার রয়েছে। এ বিষয়ে অচিরেই আমি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করে যাতে দ্রুত কাজটি করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।’