এম সাইফুল ইসলাম শাফলু : টাঙ্গাইলের সখীপুরে পকেটে ইয়াবা দিয়ে দিনমজুরকে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার তিন পুলিশ সদস্য ও সোর্সের বিরুদ্ধে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেছেন আদালত। শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম এই রিমান্ড মঞ্জর করেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই চারজনসহ পলাতক আরও তিনজনের নামে সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আইনুল ইসলাম মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। গ্রেফতারকৃত হলেন, মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গুলরা গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম, কনস্টেবল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঢুলদিয়া গ্রামের গোপাল সাহা ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মোজাটি গ্রামের রাসেলুজ্জামান এবং তাঁদের সোর্স মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল নয়াপাড়া গ্রামের হাসান মিয়া।একই মামলায় পলাতক তিনজন হলেন, ওই পুলিশ ফাঁড়ির দুই কনস্টেবল আবদুল হালিম ও তোজাম্মেল হক এবং আরেক সোর্স সখীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের আল আমিন। পলাতক তিনজন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে তারা সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। রিমান্ডে নেওয়া পুলিশের দেয়া তথ্যে ওই মামলার পলাতক আসামি সোর্স আল আমীনকে (২৫) শনিবার মির্জাপুরে গোড়াই এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সখীপুর থানা পুলিশ।
শনিবার সরেজমিন ঘটনাস্থল গিয়ে অভিযুক্ত ওই ৭ জনের নামে আরও একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়, কথা হয় একই এলাকার তিনজনের সঙ্গে উপজেলার হতেয়া মৌলানাপাড়া এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোখলেছুর রহমান জানান, গত ২২ নভেম্বর একটি সিগারেটের প্যাকেটে ৫টি ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে সিএনজিরে পেছনে রেখে তাকে ফাঁসিয়ে দেন এএসআই রিয়াজুল। পরে তার কাছ থেকে সিএনজিতে ইয়াবা রাখার অভিযোগে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন ওই চক্র। একই অভিযোগ করেন আরেক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ভাওড়াচালা এলাকার নিয়ামুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, একই দিন (২২ নভেম্বর) একই কায়দার তাঁর থেকেও ২০ হাজার টাকা নেন তারা। কাঠমিস্ত্রি হলুদিয়াচালা গ্রামের বিপুল সূত্রধরের অভিযোগ, গত ২০ নভেম্বর এএসআই রিয়াজুল ও তাঁর সহযোগিরা তার পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ৩১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ সময় স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন বিকেল পাঁচটার দিকে সাদা পোশাকে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুই সোর্স রাজাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় আসেন। তাঁরা এলাকার দিনমজুর মো. বজলুর রহমানের (২৬) পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে দেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে জোর করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলেন। এ সময় বজলুরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন পুলিশের ব্যবহৃত ওই অটোরিকশাটি আটক করে। বজলুরের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে উপস্থিত লোকজন পুলিশ ও সোর্সদের তল্লাশি করে আরো কিছু ইয়াবা পান। এতে জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ ও সোর্সদের পিটুনি দিয়ে একটি দোকানে আটকে রাখেন। পরে উত্তেজীত জনতা সখীপুর থানা-পুলিশে খবর দেন। এ সময় মির্জাপুর উপজেলার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রিয়াজুল ইসলাম, কনস্টেবল গোপাল সাহা ও রাসেলুজ্জামান এবং তাঁদের সোর্স হাসান মিয়াকে জনতা সখীপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। গ্রেফতারকৃতদের প্রথমে মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ফাঁড়িতে এবং সখীপুর থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই সখীপুর থানার এসআই আয়নুল হক বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত চারজন ও পলাতক ৩জনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন।
মামলার বাদী সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আয়নুল হক বলেন, শুক্রবার গ্রেফতারকৃত চারজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন।
সখীপুর থানার ওসি (তদন্ত)এএইচএম লুৎফুল কবির বলেন- গ্রেফতারকৃত এএসআই রিয়াজুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ অভিযোগগুলো সামনে আনা হবে।
সখীপুর থানার (ওসি) আমির হোসেন বলেন, অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়া পুলিশের দেয়া তথ্যে ওই মামলার পলাতক আসামি সোর্স আল আমীনকে (২৫) শনিবার মির্জাপুরে গোড়াই এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অপরাধী হিসেবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁরা পুলিশের কোনো দায়িত্ব পালনে যাননি। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।