মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪
Homeজাতীয়সখীপুরে টার্কি পালনে সফল আলাউদ্দিন

সখীপুরে টার্কি পালনে সফল আলাউদ্দিন

 

এম সাইফুল ইসলাম শাফলু,:
শখের বসে টার্কি পালন করে এখন সফলতার মুখ দেখছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. আলাউদ্দিন। সংসারিক কাজের ফাকে টার্কি খামার গড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। আলাউদ্দিনের টার্কি খামারের সফলতা দেখতে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই শত শত টার্কি খামের উৎসাহী লোকজন ছুটে আসছেন। উপজেলার বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হকের ছেলে মো. আলাউদ্দিন নিজ বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বাণিজ্যিকভাবে চার শতাধিক আমেরিকান টার্কি মুরগী নিয়ে গড়ে তুলেছেন টার্কি খামার। টার্কি মুরগী বিক্রি, বাচ্চা উৎপাদন ও ডিম বিক্রি করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। টার্কি মুরগীর পাশাপাশি বসতবাড়িতে তিনি তিতি মুরগী, ফ্রান্সের দেশী মুরগী, দেশি ও বিদেশী জাতের কবুতরের খামারও গড়ে তুলেছেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তাঁর স্ত্রী মিনা আক্তার।
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০১৫ সালে পৈত্রিক ২০ শতাংশ জায়গার উপর বোয়ালী পশ্চিপাড়া গ্রামে নীরিবিলি পরিবেশে আলাউদ্দিন টার্কি ফার্ম নামে একটি টার্কি মুরগীর খামার গড়ে তোলেন বিদেশ ফেরত আলাউদ্দিন। প্রথমে তিনি ঢাকা থেকে ২০০ বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। দেড় বছরের মাথায় প্রায় ৪’শ টার্কি মুরগী আছে এ খামারে। প্রতিটি টার্কি মুরগী একটানা ২২টি পর্যন্ত ডিম দেয়। দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায় টার্কি মুরগী। ৪ মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় টার্কি মুরগী। একটি টার্কি মুরগীর ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখানে প্রতি কেজি মুরগী বিক্রি হয় ৬’শ থেকে ৭’শ টাকায়। ১ মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি হয় জোড়া প্রতি প্রায় তিন হাজার টাকা। প্রতি হালী ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ৮’শ টাকা। টার্কি একটি বড় আকারের গৃহ পালিত পাখি। টার্কি ময়ুরের মত পাখা মেললে অনেকটা ময়ুরের মতোই দেখা যায়। সুস্বাদু এই মুরগীর রোগ বালাই তেমন হয়না। এর মাংসে অধিক পরিমানে প্রোটিন ও কম পরিমানে চর্বি রয়েছে। অনেকটা খাসির মাংসের মতই এ মুরগীর মাংসের স্বাদ হওয়ায় এটির মাংসও বাজারে একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৭শ সালে যুক্তরাজ্য ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে টার্কি মুরগীর জাত উৎপাদন করা হয়। উত্তর আমেরিকা টার্কি মুরগীর উৎপত্তিস্থল। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন টার্কি মুরগী পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশু-পাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। টার্কি প্রাণী সেরকম একটি সহনশীল জাত, যেকোন পরিবেশ দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
টার্কি ফার্ম মালিক মো. আলাউদ্দিন বলেন, টেলিভিশনে বিভিন্ন সময় টার্কি মুরগীর ওপর প্রতিবেদন দেখতাম। এতে আমার উৎসাহ বেড়ে যেতো। ২০১৫ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে ঢাকা থেকে প্রথমে ২’শ টার্কির বাচ্চা এনে খামার গড়ে তুলি। এখন আমার খামারে প্রায় ৪’শ ছোটবড় টার্কি মুরগী রয়েছে। কলমির শাক, বাঁধা কপি টার্কিদের বেশি পছন্দ। মাংস উৎপাদনের জন্য তাদের দানাদার খাবার দেয়া হয়। টার্কির রোগাবালাই খুবই কম। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। ৬ মাস বয়সি একটি মেয়ে টার্কির ওজন হয় ৬/৭ কেজি আর পুরুষ টার্কির ওজন হয় প্রায় ৮ কেজি। সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই খামারের পরিকল্পনা ছড়িয়ে দিতে তিনি নিজেও এখন অন্যদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ও উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি মনে করেন, বেকারত্ব দূর করতে টার্কি পালন খুবই ভালো পরিকল্পনা। তিনি তাঁর ফার্মের পরিধি ও বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করতে সরকারী ঋণী সহায়তা দাবি করেন।
সখীপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওকিল উদ্দিন জানান, আলাউদ্দিনের দেখাদেখি সখীপুরে এখন অনেকেই টার্কি মুরগী পালনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -