এম সাইফুল ইসলাম শাফলু :
‘নামে নামে যমে টানে’-একথাটি আবারও সত্যি হল দিন মজুর রফিকুল ইসলামের ক্ষেত্রে। শুধু নাম ও গ্রামের নাম মিল থাকায় জীবনে দুইবার জেল খাটতে হলো রফিকুলকে। ১৪ মে দুপুরে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে রফিকুলকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। তাই গত সাতদিন ধরে জেল খাটছেন রফিকুল। এর আগেও নাম ও গ্রামের নাম মিল থাকায় ২০১৫ সালেরও ১৪ মে পুলিশ রফিকুলকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।সে যাত্রায় তিনদিন জেল খেটে মুক্তি মেলে রফিকুলের । তাও আবার মামলার বাদীর সহযোগিতায়। রফিকুল সখীপুর উপজেলার চতলবাইদ (ভূইয়াপাড়া) গ্রামের মৃত ঠান্ডু মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ক্যারম খেলা নিয়ে উপজেলার চতলবাইদ গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে রফিকুল ইসলাম একই গ্রামের খায়রুলের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় খায়রুলের মামা সায়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে রফিকুলসহ দুইজনকে আসামি করে সখীপুর থানায় মামলা করেন। পরে ওই মামলায় রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগেই রফিকুল ইসলাম বিদেশ চলে যান। ১৪ মে দুপুরে সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক শুধুমাত্র নাম ও গ্রামের নাম মিল থাকায় চতলবাইদ গ্রামের মৃত ঠান্ডু মিয়ার ছেলে দিনমজুুর রফিকুলকে গ্রেফতার করে। দুই বছর আগেও নাম ও গ্রামের নাম মিল থাকায় রফিকুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময় তিনদিন কারাভোগের পর মামলার বাদী সায়েজ উদ্দিনের সহযোগিতায় রফিকুল মুক্তি পান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার প্রকৃত আসামি রফিকুল ইসলাম ও তার বাবা আবদুর রশিদ সিংগাপুরে অবস্থান করছেন।
মামলার বাদী উপজেলার গজারিয়া গ্রামের সায়েজ উদ্দিন জানান, গত ১৪ মে পুলিশ যে রফিকুলকে গ্রেফতার করে তাঁর বাবার নাম মৃত ঠান্ডু মিয়া বাড়ি চতলবাইদের ভূঁইয়াপাড়ায়, বয়স ৪৪ বছর। মামলার প্রকৃত আসামি রফিকুল হলেও বাবার নাম আবদুর রশিদ, বাড়ি চতলবাইদের ভাতকুড়া চালায়, বয়স ২৫ বছর। সায়েজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘দোষী ব্যক্তি সাজা পেলে খুশি হতাম। নির্দোষ রফিকুলকে বাঁচাতে আমি এর আগেও সাক্ষী দিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলাম। প্রয়োজনে এবারও আদালতে সাক্ষ্য দেব।’
রফিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, বিনা দোষে আমার স্বামীকে কেনো পুলিশ নিয়ে জেলে দিলো। এহন কে আমাগো খাবার আইনা দিবো। পুলিশ গো আমি না করছি আমার স্বামী কোনো ভুল করে নাই। আমার স্বামী কামলা (দিনমজুরের কাজ করে) দেয়। ছোট ছোট চারজন পোলাহান নিয়া আমি অহন কেমনে চলমু।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নঈম উদ্দিন বলেন, রফিকুলকে গ্রেফতারের আগে আরও যাচাই করা উচিত ছিল। এর আগেও পুলিশ একই ভুল করে রফিকুলকে জেল খাটাইয়াছেন। নিরপরাধ রফিকুলের মুক্তি দাবি জানান তিনি।
প্রতিবেশি ইব্রাহিম মিয়া বলেন, রফিকুলের বাবা আবদুর রশীদ দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন। মামলায় আসামি হওয়ায় রফিকুলকেও তার বাবা সিঙ্গাপুর নিয়ে গেছে।
সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক, এমদাদুল হক জানান, নাম-ঠিকানায় মিলে যাওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম বলেন, ‘নাম- বাবার নাম ও ঠিকানা মিল থাকায় রফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রফিকুল যে প্রকৃত আসামি নয় তা গ্রেফতারের সময় বা পরেও আমাদের জানানো হয়নি। জানানো হলে আমরা তাকে থানা থেকেই ছেড়ে দিতাম। তারপরও গ্রেফতারকৃত রফিকুল যদি ওই মামলার আসামি না হয়ে থাকে তাহলে তাঁর মুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।