এম সাইফুল ইসলাম শাফলু:
চারপাশে অন্ধকার নেমে আসার পর ভেসে আসে কান্নার শব্দ আর শতবর্ষী বয়স্ক ও ক্লান্ত এক নারী কণ্ঠের আহাজারি। এ শব্দের উৎস পরিত্যক্ত একটি ভবন। নির্জন রাতে এরকম মায়াবী কান্নার সুর সাহিত্য- সিনেমায় রহস্যের সৃষ্টি করে। হতে পারতো এটি একটি ভৌতিক গল্প। কিন্তু বাস্তবে এর পটভূমি পুরোটাই ভিন্ন। গত ৬ মাস যাবত টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে ভেসে আসছে মায়াবী এ কান্নার সুর। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে ওই রুগ্ন শতবর্ষী নারীর আহাজারি শুনা যায়। এর পর বেরিয়ে আসে মূল কাহিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শতবর্ষী ওই নারীর নাম আছিয়া বেগম। বয়সের হিসেবে শতক হাকিয়েছেন। তিনি উপজেলার বড়চওনা বিন্নাখাইরা গ্রামের ছফর আলীর মেয়ে। বিয়ে হয় কালিহাতী উপজেলার বর্গা গ্রামের নজু কারীর সাথে। সেখানে চারটি সন্তানও হয় তার। কিন্তু গর্ভে থেকেই ওই চার সন্তানের মৃত্যু হয়। এ শোকে স্বামী ১৯৯২ সালে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর সহায় সম্ভল ও পরিজন বলতে কেউ নেই। এর পরে বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করেন তিনি। শরীরের শক্তি না থাকায় গত ৬ মাস ধরে কালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা নাজমা সুলতানার সহায়তায় ভূমি অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবনেই থাকছেন শতবর্ষী ওই বৃদ্ধা।
কালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নাজমা সুলতানা বলেন, আছিয়া বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করত। হঠাৎ একদিন আমি রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে আছিয়াকে ভূমি অফিসে নিয়ে আসি। এরপর থেকেই ভূমি অফিসের একটি পরিত্যক্ত ঘরে শতবর্ষী বৃদ্ধ আছিয়া এখানে থাকছেন। তিনি আরও বলেন, শতবর্ষী বৃদ্ধা আছিয়া বেগমের দেখাশুনা করার জন্য আমি ঝাঁড়–দার রাহেলা বেগকে বলে দিয়েছি।
আছিয়া বেগম বলেন, ‘আল্লাহ জানি কেউরে বুড়ি না বানায়’ দুনিয়ার উপরের আমার কিছুই নাই নাজমা আর রাহেলা খালা আমারে দেহেন।
স্থানীয় বাসিন্ধা হেলাল উদ্দিন বলেন, আজকে এই বৃদ্ধার সন্তান যদি বেঁচে থাকতো তাহলে এখানে থাকতে হতো না। কপালের ফেরে বৃদ্ধা মায়ের চারটি সন্তানই গর্ভে থেকেই মৃত্যু বরন করে দুনিয়ায় এসেছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ বৃদ্ধা মায়ের জন্য সরকারী বা বেসরকারী সহযোগিতা অথবা কোন নিরাপদ আশ্রমের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান এসএম কামরুল হাসান বলেন, বৃদ্ধা আছিয়ার জায়গা যে পরিত্যক্ত ভবনে এটি আমার জানা আছে। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।