এম সাইফুল ইসলাম শাফলু :
বেতুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। সখীপুর উপজেলা সদর থেকে শালগ্রামপুর বাজার হয়ে পাঁকা রাস্তা ধরে আট কিলোমিটার পশ্চিমেই বেতুয়া গ্রামের স্থলচালা এলাকায় ১৯৯১ সালে এ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়। গ্রামের শিক্ষার হারকে অগ্রসর করতে মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন সমাজসেবক এবং শিক্ষানুরাগী তাদের ক্রয়কৃত ১ একর ৯০ শতাংশ জমির ওপর গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেতুয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের মধ্যে প্রিন্সিপাল রেনুবর রহমান, প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, আলহাজ্ব শামসু তাবরিজ, আবু সাঈদ মাস্টার, আবদুর রহমান ঠান্ডু মেম্বার এবং আবদুল মজিদের নাম উল্লেখ যোগ্য। এছাড়াও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিভিন্ন সময় ওই গ্রামের কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রকোশলী আতাউল মাহমুদ, আলহাজ আবদুল হামিদ, মজিদ মেম্বার, প্রকৌশলী সাইদুর রহমান ছফদের, প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, সহিদুর রহমান ধনু, মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, ওদুদ হোসেন, কামরুল হাসান, প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম (২), হাজী সায়েদ আলী, বাদশা মিয়া, খলিলুর রহমান, জলিল মাস্টার, সাইদুজ জামান, কাশেম মাস্টার, মজিদ মেম্বার, সাত্তার মেম্বার, বাদশাহ মেম্বারসহ আরও অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। লাল মাটি দিয়ে ঘেরা উচুঁ পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠায় বর্ষায় নিচু এলাকার পানির দিকে তাকালে বিশাল জলাশয় ঘেরা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি দ্বীপ মনে হয়। সুশীতল পরিবেশে মনোরম দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায় । নীড়িবিলি পরিবেশে মনটাও শান্ত হয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ওই এলাকার রাস্তাগুলো কাঁচা থাকলেও এরই মধ্যে গ্রামের প্রধান প্রধান রাস্তা পাঁকা করণ করায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এখন আর লাল কাদা পায়ে ক্লাশে যেতে হয় না। এলাকার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার যানবাহনেও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটে বা সাইকেলে নয় মোটরসাইকেল যোগে তার এখন বিদ্যালয়ে আসেন। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্বীকৃতি পেলেও ২০০১ সালে ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রথম নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি আবু সাঈদ মাস্টার ওই প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত সৎ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. কাইউম হোসাইন ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সখীপুর পিএম পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে মো. শাহজাহান মিয়া নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এমপিওভূক্তি না হওয়ায় কম্পিউটার ও শরীরচর্চা বিষয়ের দুইজন শিক্ষক এখনও বেতনভূক্ত হয়নি। অপর দুই শিক্ষক কৃষি শিক্ষা এবং জীব বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক প্রয়োজন বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান। বিভিন্ন শ্রেণি মিলে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে ৪৭৭ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিত অধ্যয়ন করছেন। এদের মধ্যে ছাত্র ২৪৭ জন এবং ছাত্রী রয়েছেন ২৩০ জন। ২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৯ জন। পাশ করে ৭৯ জন। পাসের হার শতভাগ। এসএসসি পরীক্ষায় ৩৯ জন পরীক্ষার মধ্যে পাশ করে ৩৪ জন। পাসের হার শতকরা ৮৭ ভাগ। ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয় ৩৬ জন পাশ করে ৩৪ জন। পাসের হার শতকরা ৯৫ ভাগ। এবছর ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৪ জন ছাত্র-ছাত্রী জেএসসি পরীক্ষা দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিদ্যালয়টি ২০১৪ সালে ফুটবল খেলায় ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন হয়।
নিয়মিত এসেম্বলী ক্লাশ ছাড়াও ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক দ্বারা শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে কম্পিউটার শিক্ষা ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ করানো হয়।
বিদ্যালয়ের বেশ কিছু সমস্যা এবং চাহিদার কথা উল্যেখ করে প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের একটি পাঁকা ভবন থাকলেও শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষের চাহিদা থাকায় আরও নতুন একটি পাকা ভবন দরকার। ছাত্রীদের নিরাপাত্তার জন্য বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর এবং পুরাতন ভবন সংস্কার প্রয়োজন।