এম সাইফুল ইসলাম শাফলু: অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী ভাগনিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলার হওয়ার দেড় মাস পর অভিযুক্ত সৎমামা ও সৎমা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করলেও শনিবার (০৭ এপ্রিল) বিকেলে ওই মামলার আইও সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম আত্মসমর্পণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বখাটে সৎমামা ও সৎমায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির চাচা বাদী হয়ে ধর্ষণে সহযোগিতায় সৎমা রোজিনা আক্তার ও ধর্ষক সৎমামা হাসানের (১৯) নামে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সখীপুর থানায় মামলা করেন। সে সময় কিশোরী ছাত্রী প্রায় ৮মাসের (৩৩ সপ্তাহ) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। বর্তমান মেয়েটি প্রায় সাড়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানিয়েছে ওই কিশোরীর পরিবার। আর এ ঘটনাটি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া পুকুরপাড় এলাকার। অভিযুক্ত হাসান উপজেলার কচুয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি উপজেলার কচুয়া গ্রামের স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়লেও অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় প্রায় ছয় মাস ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ওই ছাত্রী, তার পরিবার ও মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, মেয়েটির বাবা কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে রয়েছেন। সাত-আট বছর আগে মেয়েটিকে রেখে তার মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। এরপর চার বছর আগে সৎমা রোজিনাকে বিয়ে করেন বাবা। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় সৎমা রোজিনা আক্তার বছর দুয়েক ধরে তার ভাইকে বাড়িতে এনে রাখছেন। হাসান একা ঘরে থাকলে স্বপ্নে তাকে ‘বোবায়’ ধরে এমন অজুহাতে রোজিনা মেয়েটিকে মামার ঘরেই থাকার জন্য অনুরোধ করেন। মেয়েটি জানায়, এক রাতে ঘুমানোর পর ওই সৎমামা তাকে ধর্ষণ করেন। সুযোগ বুঝে এভাবে মাঝে মধ্যেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ওই সৎমামা। এ বিষয়ে তার সৎমাকে জানালেও তিনি এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। উল্টো মেয়েটিকে কাউকে কিছু না জানাতে শাসিয়ে দিয়ে প্রাণ নাশের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এলাকায়ও কানাঘুষা শুরু হলে মেয়েটিকে সৎমা রোজিনা গৃহবন্দি করে রাখে।
মেয়েটি এখন সাড়ে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক। মেয়েটির চাচা অভিযোগ করেন, বিষয়টি জানাজানি হলেও হাসান ও তার বোন বিষয়টি পাত্তা দিচ্ছে না। সৎমা রোজিনা তার ছোট ভাই (অভিযুক্ত ধর্ষক) হাসানসহ মেয়েটিকে ফেলে রেখে বাবার বাড়ি চলে যায়।
এদিকে অভিযুক্ত ধর্ষক সৎমামা হাসান ও সৎমা রোজিনা আক্তার বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মেয়েটির পরিবারের লোকজনের দাবি ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ইদ্রিছ আলী শিকদারের মধ্যস্থতায় স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মীমাসাংসার চেষ্টা করা হলেও কোন লাভ হয়নি। এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান আবদুল হামিদ মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মেয়েটিও অনাগত সন্তানসহ নিজের ভবিষ্যত নিয়ে যারপর নাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কি হতে কি হলো বুঝে উঠতে পারেনি; আমি বাঁচতে চাই, পড়তে চাই, আপনারা (হেল্প) সহযোগিতা করেন এ বলে ওই লম্পট ধর্ষক ও সৎমায়ের বিচার দাবি করে মেয়েটি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেয়ে ও মেয়ের চাচা থানায় হাজির হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শুনেছি ওই দুই আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে; তবে এখনও আদালতের কাগজপত্র আমাদের কাছে পৌঁছেনি।’