মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৪
Homeটাঙ্গাইল জেলাসখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঠিকাদারের ইচ্ছায় চলে খাদ্য সরবরাহ

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঠিকাদারের ইচ্ছায় চলে খাদ্য সরবরাহ

এম সাইফুল ইসলাম শাফলু :
টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকাদারের ইচ্ছায় রোগীদের খাদ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, প্রয়োজনের তুলনায় কম মাছ, মাংস ও তেল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা যায়। ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য যে পরিমাণ খাবার সরবরাহ করার কথা, তা না করে ঠিকাদারের ইচ্ছেমত অনিয়মন্ত্রাণিকভাবে খাবার দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মাথাপিছু রোগীর জন্য প্রতিদিন পাউরুটি ২৪৪ গ্রাম, চাল ৪০০ গ্রাম, তেল ৪০ গ্রাম, মাংস (খাসি) ২৫৪ গ্রাম, মুরগী (দেশী) ২৮২ গ্রাম, মাছ (রুই, কাতল, মৃগেল) ২৮২ গ্রাম, মাছ (গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, আমেরিকান রুই) ৩৩৮ গ্রাম, পাংগাস ৪২৩ গ্রাম, সবজি ৩৫০ গ্রাম, পিয়াজ ৫০ গ্রাম, রসুন ২০ গ্রাম, জিরা পাঁচ গ্রাম, আদা পাঁচ গ্রাম, তেজপাতা পাঁচ গ্রাম, এলাচ ১০ গ্রাম, দারুচিনি ১০ গ্রাম ও লবঙ্গ পাঁচ গ্রাম সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের সপ্তাহে তিনদিন মাংস ও চারদিন মাছ সরবরাহ করার কথা থাকলেও ১০ দিনে একদিন মাংস সরবরাহ করা হয়। তাও আবার ব্রয়লার মুরগীর মাংস। বাকী দিন রুই,কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া হয় পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ। মাছের মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে রোগীদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত। সকালের নাশতায় দেয়া পাউরুটির পরিমাণ কম । চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিন্মমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই নিন্মমানের খাবার খেতে চান না। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাঁর ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। এদিকে রোগীদের খাসির মাংসের বদলে ব্রয়লার ও রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ দেয়া হলেও সরকারী নিয়মে খাসি ও রুই মাছের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারের তালিকায় রুই মাছের তালিকা থাকলেও রোগীদের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ দেওয়া হয়েছে।
গত ছয়দিন আগে ভর্তি হওয়া রোগী উপজেলা গড়বাড়ি গ্রামের কদরজান বেগম (৭০) জানান, ছয় দিনের একদিনেও এহানে আমাগো কোন মাংস দেয় নাই, প্রতিদিনই দুই বেলা কইরা মোটা চাইলের ভাতের নগে পাঙ্গাস আর তেলাকই মাছ দেয়। একই জিনিস এতোবার খাওন যায় না।
হাসপাতালের বাবুর্চি মজিবর রহমান ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা বেগম জানান, এখানে রোগীদের খাবারের কোন তালিকা নেই। ঠিকাদাররা যখন যা দেন তাই আমরা রান্না করে সরবরাহ করি।
খাবারের তত্বাবধানে থাকা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স খোদেজা আক্তার বলেন, বিধি মোতাবেক রোগীদের খাবার দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে বারবার বলার পরেও তিনি কোন তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীনুর আলম বলেন, আমি সম্প্রতি এ পদে যোগদান করেছি। দায়িত্ব বুঝে পেলে খাবারের অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
হাসপাতালে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার মীর শামসুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তালিকা মোতাবেকই খাবার সরবরাহ করছেন বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাফিউল করিম খান জানান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য দেখবালের দায়িত আরএমও ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের। খাদ্য সরবরাহে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -