গণমাধ্যমকর্মীদের গোপনে চিত্র ধারণের কাজটি সঠিক নয় বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সরকারি গোপন নথি গোপনে ধারণ করলে শাস্তির বিধানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তার এই অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেটা করেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইজে গোপনে ধারন এটা কি ঠিক? এটা ঠিক নয়।’
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা সোমবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা নিয়ে তার কাছে প্রশ্ন রাখেন। এই ধারাটি ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সাংবাদিকরা জন্য ক্ষতিকর বলে সমালোচনা করছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ারর্কে ধারণ, প্রেরণ, সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’ এই আইনে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর আর এই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই ধারাটি সাংবাদিকদের ওপর প্রয়োগ করা হবে। সরকারের দুর্নীতি যেন প্রকাশ না পায় সে জন্যই এমন একটি বিধান যোগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী। বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘৩২ নম্বর ধারা দিয়েও সাংবাদিকদের থামানো যাবে না।…আইন করেও আপনাদের থামাতে পারব বলে মনে হয় না।’ গোপনে যদি কোন দুর্নীতির ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা হয় তাহলে এটা কি গুপ্তচবৃত্তি হবে কি না- এমন প্রশ্ন ছিল বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা গোপনে ভিডিও করবেন কেন?’। সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, দুর্নীতির ভিডিও চিত্র কি প্রকাশ্যে ধারণ করা সম্ভব কি না। জবাবে তোফায়েল বলেন, ‘আপনারা আমার এখানে আসেন। সবকিছু ওপেন বলে দেবো।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনটি করেছিল বিএনপি। সেখানে বিস্তারিত বিষয়গুলো ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যে আইনটি করা হলো, সেখানে বিস্তারিত কথাগুলো বলা আছে। এখানে স্বচ্ছতার সঙ্গে সব কিছু করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা হয় তাতেও নাখোশ তোফায়েল। বলেন, ‘আপনারা যেভাবে লেখেন সেটাও তো ঠিক নয়। একজন এমপি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তার একটা সম্মান আছে। তার বিরোধীরা অনেক সময় কিছু তথ্য দেয়। আর সেটা আপনারা পত্রপত্রিকায় যেভাবে লেখেন, ‘দিস ইস নট কারেক্ট’। ‘ধরুন আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনারা যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু লেখেন তাহলে কি আমি লিখে কোনো জবাব দিতে পারব?’। ‘আপনারা দেশকে ভালোবাসেন। দেশ নিয়ে গবেষণা করেন, এটা ভালো। কিন্তু প্রতিটি নিউজ অথেনটিক (বস্তুনিষ্ঠ) হওয়া দরকার। আপনারাও চান সবকিছু স্বাভাবিক থাকুক। আমাদেরও সেই চেষ্টা। যে গ্রাম ছিল অন্ধকার সেই গ্রাম এখন আলোকিত। যে গ্রামে যাওয়ার জন্য কোনো পথ ছিলো সেই গ্রামের রাস্তা এখন পাকা। ছিল না বিদ্যুৎ। আমিও তো গ্রামে অন্ধকারেও চলাফেরা করেছি। বর্ষাকালে কাঁদা মাটিতে হেটেছি। এখন তার আর নেই।’