নিউজ ডেস্কঃ প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পর আপন ঠিকানায় ফিরছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন হলেও এই প্রথমবার নিজস্ব ভবন পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে নতুন দশতলা ভবনে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন ২৩ জুন (শনিবার) সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলীয় সব সাংগঠনিক কার্যক্রম বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের নতুন কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হবে। আর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম ও দলীয় সংস্থাগুলোর গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভবনটিতে ঢুকতেই হাতের বামপাশে অভ্যর্থনা ডেস্ক রয়েছে। দশতলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরই বিশাল। সিঁড়ির পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে দুটি লিফট। বেসমেন্ট ও প্রথম তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের কথা থাকলেও ভবনের সামনের সড়কে নিজস্ব জায়গায় সে ব্যবস্থা করা হবে। ভবনের নির্দেশনা অনুযায়ী, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রয়েছে সাধারণ অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ এবং সপ্তম তলায় দলের কোষাধ্যক্ষের অফিস। অষ্টম তলায় দলের সাধারণ সম্পাদকের এবং নবম তলায় রয়েছে বুলেটপ্রুফ ডাবল গ্লাসবিশিষ্ট সভাপতি অফিস। এ তলায় রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। এছাড়া সপ্তম থেকে নবম তলায় দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সম্পাদকমন্ডলীর কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ রাখা হয়েছে। থাকছে সাংবাদিক লাউঞ্জ, ভিআইপি লাউঞ্জ ও ডরমিটরিও। আর দশম তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থা। তবে আগের সিদ্ধান্ত ভবনের ছাদের ওপর হ্যালিপ্যাড তৈরির কথা থাকলেও তা আপাতত স্থগিত রয়েছে। এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের কথা জানিয়েছেন ভবনটিতে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা। তারা আরও জানান, দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমটি ৩৫০ আসনবিশিষ্ট। আর তৃতীয় তলায় ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কনফারেন্স রুমের দুইপাশে বেশকিছু কক্ষও রয়েছে। তিন তলার সামনের অংশটায় রয়েছে ‘ওপেন স্কাই টেরাস’। এছাড়া ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় দলের মূল কার্যালয়ের পাশাপাশি অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অফিস থাকছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এ নবনির্মিত ভবনের চাবি তুলে দেবেন গণপূর্তমন্ত্রী ও দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন। এরপর ভবনটি উদ্ধোধন শেষে শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কক্ষ বরাদ্ধ করে দিবেন। এ দিনটিকে ঘিরে ভবনজুড়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি। দলীয় সূত্র জানায়, ভবনের জন্য ৮ কাঠার জায়গাটি সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বকেয়া বিল হিসেবে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। দলীয় ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভবনের সামনের দেয়ালে দলের সাইনবোর্ডসহ দলীয় শ্লোগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, চার মূলনীতি খোদাই করে লেখা হয়েছে। কাচ দিয়ে ঘেরা ভবনের সামনের দেয়ালের দুইপাশ আর মাঝখানে সিরামিক-ইটের বন্ধন। ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের ফ্লোরগুলো ৩ হাজার ১০০ বর্গফুটের। ভবনের সামনে-পেছনে বাকি জায়গায় বাগান তৈরি করা হবে। ভবনটির সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করেছিল রোজ গার্ডেনে। রোজ গার্ডেন থেকে ১৯৫৩ সালে ৯ কানকুন লেনে, ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকায় ৫৬ সিমসন রোডে, ১৯৬৪ সালে ৯১ নবাবপুর রোডে, এরপরে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে, পুরানা পল্টনে কার্যালয় থেকে স্থানান্তরিত হয়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলেছিল অনেকদিন। এরপর যায় সার্কিট হাউস রোডে। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলে নানা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। সেটাও আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর আগে।