শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
Homeউদ্দোক্তাগোবর থেকে নুড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী শতাধিক নারী

গোবর থেকে নুড়ি বানিয়ে স্বাবলম্বী শতাধিক নারী

‘একটা নুড়ি দুই টাকা। একশো নুড়ি দুইশো টাকা। নিজেদের গরু আছে, গরুর গোবর দিয়ে নুড়ি তৈরি করে বিক্রি করি। নুড়ি বিক্রির এই টাকায় সংসারে উপকার হয়। নিজের কিছু খরচ রেখে বাকি টাকা তুলে দিই স্বামীর হাতে। ছেলে-মেয়েদেরও চাহিদা মেটানো যায়।’ এভাবেই কথাগুলো বললেন তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউনিয়নের আজগড়া গ্রামের পিংকি বিশ্বাস (৩০)।

শুধু তিনি একা নন, তার মতো আরও শতাধীক নারী গোবর দিয়ে নুড়ি বানিয়ে বিক্রি করছেন। নুড়ি বিক্রির টাকায় নিজের হাতখরচ আর পরিবারের ছোটখাটো নানা চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা। বর্ষার সময় ছাড়া বছরের প্রায় ৮ মাস এই কাজই করেন খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া এলাকার নারীরা।

এতে একদিকে যেমন তাদের আয় হচ্ছে অন্যদিকে জ্বালানির জন্য গাছপালার ওপর চাপ কমছে। নির্বিচারে নিধনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে অক্সিজেনের আধার।

খুলনা শহর থেকে মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার দূরে তেরখাদা উপজেলার ১ নম্বর আজগড়া ইউনিয়ন।
খুলনার তেরখাদা উপজেলার ৭৫ বর্গ কিলোমিটারের এই আজগড়া ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৭৯৬ জন লোকের বসবাস। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ১৭৬ জন। স্বাক্ষরতার হাত ৪৬.৬ শতাংশ।

এক সময় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার করণে এখানকার মানুষ চাষাবাদকেই তাদের প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেই চাষাবাদের সঙ্গে যোগ হয় মাছচাষও। ধান, শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য সবজিও উৎপাদন হয় এই ইউনিয়নে। বছরের একটা বড় সময় বিলে কোনো ফসল উৎপাদন না হওয়ায় সেখানে বাধাহীনভাবে চরে বেড়ায় গরু। যে কারণে প্রতিটি পরিবারেই গরুসহ কমবেশি অন্যান্য গবাদি পশু রয়েছে।

আজগড়া গ্রামের গৃহবধূ ললিতা রানী বিশ্বাস বলেন, প্রতি মাসে তিনি এক থেকে দেড় হাজার নুড়ি বানাতে পারেন। সেগুলো রাস্তার পাশে অথবা বাড়ির মধ্যেই শুকিয়ে বিক্রি করেন। খরচ বলতে শুধু পাটকাঠি কিনতে হয়। সে করণে একটা নুড়ি বিক্রি করতে পারেন দুই টাকায়।

তিনি বলেন, সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় নুড়ি রেখে বাকিটা বিক্রি করেন ফঁড়িয়াদের কাছে। ফঁড়িয়ারা বাড়িতে এসে নিয়ে যায়। তাদের কাছ থেকে নেওয়া নুড়ি অন্য এলাকায় বিক্রি হয় তিন টাকায়।

মাসে দেড় হাজার নুড়ি বিক্রি করতে পারলে তিন হাজার টাকা হয়। যা তিনি নিজে কিছু রেখে বাকিটা তুলে দেন স্বামীর হাতে। ছেলে মেয়েদের আবদার মেটাতেও পারেন তিনি।

আজগড়ার বিআরবি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি মল্লিক সুধাংশু বলেন, এই গ্রামের অধিকাংশ নারী নুড়ি তৈরি করেন। এতে করে তারা অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছেন। জ্বালানি হিসেবে নুড়ি ব্যবহার করায় গ্রামে এখনও প্রচুর গাছপালা রয়েছে। যা আমাদের অক্সিজেন ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।

চেয়ারম্যান কৃষ্ণ মেনন রায় বলেন, গোবর দিয়ে নুড়ি বানিয়ে ইউনিয়নের অধিকাংশ নারী নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সংসারের নানা কাজে সহায়তা করতে পারছেন। নিজেদের পারিবারিক কাজের জন্য যেটুকু জ্বালানি প্রয়োজন তা রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেন সবাই। তবে এই কাজের জন্য কাউকে সরকারি বা বেরসারকারিভাবে সহায়তা করা হয় না।

 

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -