শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
Homeটাঙ্গাইল জেলামির্জাপুরটাঙ্গাইলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাইরে থেকে চাল সংগ্রহ

টাঙ্গাইলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাইরে থেকে চাল সংগ্রহ

নিউজ টাঙ্গাইল ডেস্ক: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে চাতাল কলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকলেও সংশ্লিষ্টরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাল সংগ্রহ করছেন। এজন্য গুদামের কর্মকর্তাদের কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা হারে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে চাতাল কল মালিকরা জানিয়েছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মির্জাপুর উপজেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করার কথা। গত ৬ মে উপজেলার সাতজন চাতাল কল মালিক টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চুক্তিমতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৬৩১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের কথা রয়েছে। এজন্য সরকার মির্জাপুর থেকে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা চালের দাম বেঁধে দিয়েছে।

গত ১৩ মে থেকে মির্জাপুরে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী চাতাল কল মালিকরা স্থানীয়ভাবে নতুন ধান ক্রয় করে চাল বানিয়ে তা সরকারকে দিবেন। কিন্তু খাদ্য গুদামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিয়ে কালিহাতি, জামালপুর, শেরপুর, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রাকযোগে রাতের আঁধারে চাল গুদামে ঢুকাচ্ছেন। আর কাগজে কলমে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের নামে চাল সরবরাহ হচ্ছে বলে উল্লেখ করছেন। গুদামে তড়িঘড়ি চাল ঢুকানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকদের দায়িত্বে থাকা একটি সিন্ডিকেট যুক্ত বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, মিলারদের সঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের চুক্তি হয়েছে। চাল কোন জায়গা থেকে আসে তার তদারকি করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও তার গুদামের সাব ইন্সপেক্টর কায়েস। তারা গিয়ে চাল দেখে রিপোর্ট দিলে গোডাউনে চাল নেয়া হয়। চাল গুদামে মজুত করার কাজ হ্যান্ডেলিং করে গুদামের ডিলারদের একটি অংশ।

তিনি আরও বলেন, ২৩ তারিখের মধ্যে ৬৩১ টন চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এজন্য চাতালের মালিকরা আগের ধান থাকলেও সেই ধান চাতালে শুকিয়ে চাল দিচ্ছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৭৭.২০০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা জানান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুরে এ পর্যন্ত ৪০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। কিন্তু খাদ্যগুদাম এরই মধ্যে লক্ষমাত্রার অর্ধেক চাল সংগ্রহ করে ফেলেছে। এটা কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন যাবত একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যগুদামে গুদামের কর্মকাণ্ড চলে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাজী রাইস মিল নামক চাতাল কল মালিক কাজী ওবাইদুর রহমান বলেন, আমাকে ৯০ টন চালের টার্গেট দেয়া হয়েছিল। আমার মিলে ১৫ দিন ধরে শ্রমিক নেই। বাহির থেকে ৮৯ মেট্রিক টন চাল এনে দিয়েছি। আর যে যেখান থেকে পারছে আনছে। কেউ কালিহাতি, কেউ বগুড়া। আর গুদামে চাল ঢুকাতে কেজি প্রতি টাকা দিতে হয়।

অপর চাতাল কল থ্রি ব্রাদার্স রাইস মিলের পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, তার মিলে পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই। মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ২১১ মেট্রিক টন চালের মধ্যে এ পর্যন্ত নিজের মিলসহ ৯০ টন চাল চাল দিয়েছি।

চাতালকল মালিকদের দেয়া তথ্য মতে, প্রতিটন চাল গুদামে দিতে চাতাল মিল মালিকদের ৩-৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মির্জাপুরের বাইরে থেকে কম দামে নিম্নমানের চাল ক্রয় করে অনৈতিকভাবে মোটা অংকের টাকা লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. আলী আযম বলেন, মির্জাপুরের সাতটি চাতাল মিলের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। জামালপুর, কালিহাতি ও রংপুর এলাকা থেকে চাল আনা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বলেন, চুক্তিবদ্ধ মিলের মালিকরা স্থানীয়ভাবে ধান ক্রয় করবে। সেই ধান চাল করে গুদামে সংগ্রহ করতে হবে। তা ছাড়া চাল সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হলে তার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -