শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
Homeটাঙ্গাইল জেলাঘাটাইলমালয়েশিয়া খুন হওয়া প্রবাসী টাঙ্গাইলের সোহেলের লাশ ফেরত চায় পরিবার

মালয়েশিয়া খুন হওয়া প্রবাসী টাঙ্গাইলের সোহেলের লাশ ফেরত চায় পরিবার

ঘাটাইল প্রতিনিধিঃমালয়েশিয়া খুন হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী সোহেল মিয়া (৩৫) হত্যার বিচার ও তার লাশ দ্রæত ফেরত চায় পরিবার। সোহেল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দক্ষিণ ধলাপাড়া গ্রামের মরহুম আহমেদ মিয়ার ছেলে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি মালয়েশিয়া প্রবাসী। সেখানে তিনি একটি কারখানায় কাজ করতেন।

সরেজমিনে সোহেলের গ্রামের বাড়ি উপজেলার দক্ষিন ধলাপাড়া গ্রামে গেলে সোহেলের মাসহ পরিবারের লোকজন ও আত্বীয়স্বজনদের কান্না ও বিলাপে এক হ্নদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় সোহেলের মা আমিনা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘আমি আমার পুলার মুখটা দেখবার চাই। তোমরা আমার একমাত্র পোলার লাশটা দেশত আনবার ব্যবস্থা কর। যারা আমার পোলেরা মারছে আমি হেগর বিচার চাই। ওরা আমার পোলারে যে কষ্ট দিয়া মারছে তার চাইতে বেশি কষ্ট দিয়া যেন ওগো মারে সরকার। আমি ওগো ফাঁসি চাই। ’

সোহেলের বোন পারভীন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাইডা মালয়েশিয়া যাওনের পর আর দেশে আহে না। গত কোরবানির ঈদে আইতে চাইছিল তাও আহে নাই ওই দেশের কোম্পানির মালিক তারে ছাড়ে নাই। আমার ভাইরে মারার পেছনে কোম্পানির মালিকের হাত আছে। ’

সোহেলের বোনজামাই বিল্লাল হোসেন ও প্রবাসী স্বজনরা জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মালয়েশিয়ার তামিলজায়া এলাকায় বাসা থেকে সোহেলকে অপহরণ করা হয়। অপহরনের পর সোহেলের ফোনেই তাকে দিয়ে অপহরনকারীরা তার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তি দাবি করে। বিষয়টি আমি পরিবারের সকলকে জানাই। টাকা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে সোহেলকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে অপহরনকারীদের সাথে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ ঠিক করা হয়। পরে তাদের মোতাবেক গত ২৮ সেপ্টেম্বর ডাচ-বাংলা ব্যাংক ঘাটাইল শাখা থেকে বাংলাদেশের বরিশালের একটি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে অপহরণকারীদের দাবি করা ৫ লাখ টাকার মুক্তিপণ পাঠাই। তারপর থেকেই ওই চক্র মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

টাকা দেওয়ার পরও মুক্তি না পেয়ে থানার ওসি জেলার এসপি, ডিসি ও স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়সহ বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে অবগত করে অভিযোগ দেই। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী সোহেলের মামা মিজানুর ওই দেশে দুটি মামলা করেন। একই সাথে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। আমার অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের বরগুনা থেকে মুক্তিপণের টাকাসহ নাসির উদ্দিন (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন র‌্যাব। পরদিন ঘাটাইল থানা পুলিশ তাকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের প্রবাসী নিহতের স্বজনদের বরাত দিয়ে সোহেলের বোনজামাই আরো জানান, মামলার পরিপেক্ষিতে মালয়েশিয়ার কাজং পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ অক্টোবর বিকেলে বেরানং এলাকা থেকে দুই বাংলাদেশি এবং পরদিন সেমোনিয়া এলাকা থেকে আরও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ গ্রেফপ্তার হওয়া মামুন শিকদার ও আলমগীর নামে দুজনের নাম প্রকাশ করলেও তদন্তের স্বার্থে বাকি দুইজনের নাম গোপন রেখেছে।

অপহরণের ঘটনায় আটক ৪ প্রবাসী বাংলাদেশির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্র ধরে ৬ অক্টোবর সোহেলের হাত-পা বাঁধা অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে মালয়েশিয়া পুলিশ।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সেলাঙ্গর রাজ্যের সেরিকামবাগানের তামিং জায়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক সংলগ্ন একটি কারখানার পেছনের জঙ্গল থেকে সোহেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের লাশের হাত ও মুখ সেলোফেন টেপ এবং একটি সারং দিয়ে বাঁধা ছিল। গত ৭ অক্টোবর (শুক্রবার) সোহেলের প্রবাসী স্বজন ও আমাদের পরিবারের লোকজন লাশের ছবি দেখে সোহেলের লাশ বলে শনাক্ত করি।

সোহেলের মা-বোন -বোনজামাই সহ সোহেলের আত্বীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের কাছে সোহেল হত্যার বিচার চেয়ে দেশে ও বিদেশে হত্যার সাথে জড়িত দোষিদের ফাঁসির দাবি জানান। একই সাথে সোহেলের লাশ দ্রæত দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

নিউজ টাঙ্গাইলের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন - "নিউজ টাঙ্গাইল"র ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

- Advertisement -
- Advertisement -