গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে দেশে করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচি। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সহস্রাধিক হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে ডাক্তার-নার্সসহ সম্মুখসারির কর্মী এবং ৫৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের।
গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হলেও গণটিকাদান কর্মসূচি মূলত শুরু হয়েছে গতকাল রবিবার থেকে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে অনেক দেশের নাম। অপেক্ষার শেষ ছিল না বাংলাদেশের মানুষেরও। টিকা নিয়ে নানা জল্পনা-গুজবের ডালপালা বিস্তার করেছিল যড়যন্ত্রকারীরা। এই টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে তার অবসান হলো। তাতে করে দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

জনগণ যাতে টিকার ওপর আস্থা রাখতে পারে সেজন্য প্রথম দিন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করেছেন। রবিবার থেকে রাজধানী ঢাকার ৫০টিসহ সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে একযোগে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় ২০৪টি এবং দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৪০০টি দল টিকাদানে কাজ করছে। এভাবে এক দিনে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।
এরই মধ্যে ঢাকার জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির স্টোর থেকে টিকার ডোজ কোল্ড বক্সে সংরক্ষণ করে ৬৪টি জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র এবং প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। টিকা সংরক্ষণ, টিকা দেওয়া, টিকা কেন্দ্র পরিচালনা, টিকার প্রতিক্রিয়াসহ সব বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিকা নিতে আগ্রহীদের ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অর্থাৎ নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশা, শারীরিক পরিস্থিতি, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং ফোন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। বিভিন্ন কারণে যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন না তাদের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে তথ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে স্পট নিবন্ধনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্পট নিবন্ধন যেদিন হবে, সেদিনই টিকা দেওয়া যাবে না। তাদের নতুন আরেকটি তারিখ দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ৫০-এর বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা বেশি, তারা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন না করতে পারলে তাদের সহযোগিতা করার জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেয়রসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং দুজন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রতিটি দলে চারজন সদস্য থাকছে। টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠে ৪২ হাজার কর্মী কাজ করছে। প্রত্যেকটি দলের স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে সব মিলিয়ে প্রথম দিনে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হবে। প্রথমটি নেওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। নইলে প্রথম ডোজের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য নিয়মমাফিক টিকা নেওয়া অপরিহার্য। এভাবে আগামী জুনের মধ্যে দেশের সাড়ে ৫ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পর প্রত্যেককে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন চিকিৎসকরা।
সরকারের কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং উপহার হিসেবে ভারতের পাঠানো ২০ লাখ ডোজ মোট ৭০ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা আনা হয়েছে দেশে। পর্যায়ক্রমে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অবশেষে টিকা নিয়ে নানা জল্পনা-গুজবের অবসান হলো। টিকা পেয়ে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছি আমরা। আমরা শিগগির করোনাকালের এ দুঃসময় অতিক্রম করব। করোনাভাইরাস নির্মূলে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে দেশের মানুষের কথা ভেবে টিকা সংগ্রহে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানাই।
টাঙ্গাইল জেলার খবর সবার আগে জানতে ভিজিট করুন www.newstangail.com। ফেসবুকে দ্রুত আপডেট মিস করতে না চাইলে এখনই News Tangail ফ্যান পেইজে (লিংক) Like দিন এবং Follow বাটনে ক্লিক করে Favourite করুন। এর ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে নিউজ আপডেট পৌঁছে যাবে।